বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সিমলা বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নামে পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর পোস্টার লাগিয়ে ও পটকা ফুঁটিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল তারা।
এরআগে ১৯৯৯ সালে আত্রায় উপজেলার মনিহারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছাত্তারকে পন্ডিতপুকুর বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করে সর্বহারা পার্টির সদস্যরা। এরপরে তারা আর প্রকাশ্যে আসেনি। দীর্ঘদিন পর সর্বহারা পার্টির পোস্টার দেখে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের সিমলা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানায়, নন্দীগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সিমলা বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নামে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়। সিমলা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেয়ালে এ পোস্টারগুলো দেখা যায়। এই পোস্টারে নরেদ্র মোদীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের আহবানসহ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে গণবিরোধী কর্মসূচি প্রতিহত করার কথা বলা হয়। এই ঘটনায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এরআগে ১৯৯৯ সালে নওগাঁ জেলার আত্রায় উপজেলার মনিহারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছাত্তারকে নন্দীগ্রামের পন্ডিতপুকুর বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করে সর্বহারা সদস্যরা। এ ছাড়া ২০০১ সালের দিকে ভাটরা ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নামে পোস্টার সাঁটানো হয়। তারপর থেকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি উত্তরাঞ্চল শাখা কর্তৃক প্রচারিত ওই পোস্টারে উল্লেখ করা হয়- হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদ দাতা ও ভারতের সংখ্যালঘু নিপীরিত জাঁতি জনগণের প্রধান শত্রু, ফ্যাসিষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদী ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসবে এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন! জাতীয় বেঈমান শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ ও তথাকথিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়র্ন্তী পালনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের গণবিরোধী কর্মসূচি প্রত্যাখান করুন, প্রতিহত করুন! মাওবাদী বিপ্লবীদের নেতৃত্বে ৭১ সালের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে, মাওবাদী গণযুদ্ধ ও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী পালন করুন! ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আওয়ামী উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্ছার হোন! শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত, আদিবাসীসহ সকল নিপীড়িত জনগণের প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে মাওবাদী গণযুদ্ধ গড়ে তুলুন, নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করুন! গণযুদ্ধের চলমান প্রবাহকে অব্যাহত রাখুন, বিকশিত করুন, উন্নত স্তরে উন্নীত করুন! ভারত ও ফিলিপাইনে মাওবাদীদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণযুদ্ধ সমর্থন করুন! গ্রামে গ্রামে গোপন গেরিলা স্কোয়াড গড়ে তুলুন, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির গণমুক্তি বাহিনীতে যোগদিন! শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার জিন্দাবাদ! মার্কসবাদণ্ডলেনিনবাদণ্ডমাওবাদ, গণযুদ্ধ-জিন্দাবাদ!
পোস্টারের নিচে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি, উত্তরাঞ্চল শাখা, মার্চ/২০২১ লেখা রয়েছে। এ ছাড়া পোস্টারের শিরোনাম দেয়া হয়েছে দুনিয়ার সর্বহারা ও নিপীরিত জাঁতি জনগণ এক হও!
সিমলা বাজারের নৈশ্য প্রহরী চাঁন মিয়া ও ওসমান আলী বলেন, রাত দেড়টার দিকে ৫ জন মুখোশ পড়ে বাজারে এসে সর্বহারা পরিচয় দেয়। তারা আমাদের চুপ করে বসে থাকতে বলে। এ সময় তারা আধাঘন্টা ধরে বিভিন্ন দোকানের দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়ে চলে যায়।
ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদুল বারী বলেন, দীর্ঘদিন আগে নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পোস্টার দেখা গেছে। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে নওগাঁ জেলার আত্রায় উপজেলার মনিহারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছাত্তারকে নন্দীগ্রামের পন্ডিতপুকুর বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করে সর্বহারা সদস্যরা।
নন্দীগ্রাম থানার কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।