হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। আর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ বাংলাদেশ এক মহেন্দ্রক্ষন অতিক্রম করছে। জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী আর স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী মিলে মিশে একাকার হয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরী করেছে। ‘মুজিব চিরন্তন’ শিরোনামে দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগ দিযেছেন নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানরা। আর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন ক্যানাডা, জাপান ও গনচীনের রাষ্ট্র প্রধানরা সহ আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ভুয়োসি প্রশংসা করেছেন। সশ্রদ্ব চিত্তে স্বরন করেছেন জাতির পিতারকে। বঙ্গবন্ধুর মানুষের প্রতি ভারোবাসা আর দেশ প্রেমের উদাহরণ দিতে গিয়ে তাকে মহানায়কের আসনে বসিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট নামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর হামলা চালায়। ফলে ২৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষনা করেন বাঙ্গালি জাতির বহুকাংক্ষিত স্বাধীনতা। অবশ্য এর আগে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙ্গালির আবেগ ও আকাংক্ষাকে ধারন করে তিনি ঘোষনা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মূলত: এটাই ছিল স্বাধীনাতর ডাক। এরপর দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে আনি বিজয়ের লাল পতাকা। ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভমের বিনিময়ে বিশ^ মানচিত্রে আজ বাংলাদেশের অবস্থান উজ্জ্বল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় পাকিস্তানী কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী তাকে প্রহসনমূলক ফাঁসির হুকুম দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টলেননি। বরং বুক উঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি মুসলমান। আমি জানি, মুসলমান মাত্র একবারই মরে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙ্গালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।
মূলত: শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেমন ছিলেন মানবদরদী তেমনী অধিকার আদায়ে ছিলেন আপোষহীন। চল্লিশের দশকে এ ছাত্র নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী’র সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজীনতিকে যুক্ত হন। ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র ছ’দফা, ৬৯’র গণঅভ্যূস্থান, ৭০’র নির্বাচনসহ বাঙ্গালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য তাকে বহু নির্যাতন সইতে হয়েছে, দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে কারাগারে। কিন্তু তিনি বাঙ্গালির অধিকারের বিষয়ে কখনো আপস করেননি।
আজ তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। আজ আর কেউ বাংলাদেশকে বটমলেস বাসকেট বলে না। বরং যারা বলতো তারাই এখন বলছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ সমুদ্র থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজয় সবখানের বাংলাদেশের পতাকা পত পত করে উড়ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ সামাজিক প্রতিটি সুচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। আজ স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যয় হোক সব ভেদাভেদ ভুলে দেশ ও জনগনের কল্যাণেসবাই এক সাথে কাজ করা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দলাদলি ভুলে দেশের জন্য সবাই এক হয়ে কাজ করি। অর্ধ শতাব্দি একটি দেশের জন্য কম সময় নয়। তাই আমাদের স্বাধীনতার প্রত্যাশা আর প্রান্তির হিসাব মেলাতে অনেকে সচেষ্ট। হয়তো আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই অনেক প্রত্যাশাই পূরন হয়নি। তবে এ কথা সত্য গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপর রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভ ও ৫০ বিনিয়ন ডলারের ওপরে। তৈরি পোষাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও ভালো। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পাশ^বর্তি অন্যান্য দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও এসেছে সাফল্য। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে, বেড়েছে নারীর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের হার। শিশু মৃত্যু ও মার্তৃমৃত্যু হার কমাবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার।
১৯৭২ সালের ৩০ জুন স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদে প্রথম বাজেট ঘোষনা করেন সেই সময়ের বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, আর সেই বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। কিন্তু ৫০ বছর পর চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কালাম। বাজেটের আকারে এই বিশাল পরিবর্তনের পাশাপাশি গুনগত দিক থেকেও বাংলাদেশের অর্থনীতির তাকলাগানো উত্থান হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ- বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিদেনে বলা হয়েছে, ২০৩২ সালে বাংলাদেশের পেছনে থাকবে মলোয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিংঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিন আফ্রিকার দেশ। আগামী ১৫ বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ থাকবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রতিবেদনে বলা হয়; গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ১২টি দেশকে টপকে গেছে। আগামী ১৫ বছরে টপকে যাবে আরো ১৭টি দেশকে। এ যাত্রার প্রথম পাঁচ বছরে টপকে যাবে ৫টি দেশকে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ হবে ৩৬তম অর্থনীতির দেশ। পরের পাঁচ বছর আরো ৯টি দেশকে পেছনে ফেলে ২০২৮ সালে হবে ২৭তম বড় অর্থনীতির দেশ। পরের পাঁচ বছরে আরো টপকাবে ৩টি দেশকে।
পদ্মা সেতু আজ আর আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত যুক্ত। বিশে^র কঠিনতম দুর্যোগ করোনাকালেও বাংলাদেশ অদম্য। থেমে যায়নি অগ্রযাত্রা রয়েছে অব্যাহত। একসময় যে বাংলাদেশকে বলা হোতা বন্যা, ক্ষরা ও অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। আজ তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে সফলতার সাথে খাদ্য উৎপাদনে এনেছে স্বয়ংসম্পূর্নতা। এত আনন্দের মাঝেও আমাদের মাঝে কিছু দু:খজনক কথা বলতে হচ্ছে, আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে পারিনি। গণতন্ত্র শক্ত ভিত পায়নি। বেরুতে পারিনি দূর্নীতির কালো গহবর থেকে। তাই কারো ঘরের দরজা পর্যন্ত টাকা যেতে না পারলেও কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তাই গৌরব করে বলতে পারছিনা আমরাই সেরা। তাই সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের আরো কিছু কাজ করতে হবে। এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হবে দেশের অর্থনীতিতে এবং রজানৈতিক কর্মকান্ডে। স্বাধীনতার রজত জয়ীন্ততে এহোক আমাদের প্রত্যয়। অন্তত: শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে।