দীর্ঘদিনেও দেশের প্রধানতম স্থলবন্দর বেনাপোলে কেমিক্যাল ও খাদ্যপণ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ৪ড়ে ওঠেনি। ফলে ওই বন্দর ব্যবহার করে আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য হয় তার ৭০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েই হয়। ওই বন্দরে বছরে কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়। আর বেনাপোল বন্দরের আমদানি বাণিজ্য থেকে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে কাস্টমস। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত কেমিক্যাল ও খাদ্যপণ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তা ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। তাতে কেবল পণ্য পরীক্ষণেই ২০ দিন থেকে এক মাস লেগে যায়। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানিকারকরা। কারণ সময়ক্ষেপণ হওয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার বন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় তাদের অতিরিক্ত মাশুলও গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেনাপোল বন্দর থেকে বড় অংকের রাজস্ব আহরণ হলেও সেখানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। স্থলবন্দরটির অব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪ শতাধিক ধরনের পণ্য আমদানি হয়। ওসব পণ্যের মধ্যে শিশু খাদ্য, খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প-কারখানার কেমিক্যাল-জাতীয় ৫৫টি পণ্য পরীক্ষণ সার্টিফিকেট ছাড়া খালাস দেয়া হয় না। ওই ধরনের পণ্য খালাসের আগে অন্যতম শর্ত পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণ। কিন্তু ওই পণ্যের মান পরীক্ষণের তেমন কোনো সুব্যবস্থা বেনাপোল কাস্টম হাউজে নেই। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ে অনেক আমদানিকারকই বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, কাস্টমস ভবনে কেমিক্যাল ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য পরীক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত পণ্য খালাসে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে ২৫-৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি আমদানি পণ্য বন্দরের পণ্যাগার বা ট্রাকে রেখে ব্যবসায়ীদের মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যার প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়ছে। বাণিজ্যিক বিভিন্ন সভায় বেনাপোল কাস্টম হাউজে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের পূর্ণাঙ্গ শাখা স্থাপনের দাবি জানালেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, পণ্য পরীক্ষণের সমস্যা নিরসন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি পণ্য চালান আমদানি করতে এলসিসহ ধাপে ধাপে বিভিন্ন খরচ আছে। যদি পরীক্ষণ সমস্যায় লম্বা সময় পণ্য চালান আটকে থাকে তবে সব খরচ ওই ব্যবসায়ীর ওপর পড়ে। আর যদি সময়মতো কাঁচামাল কারখানায় না পৌঁছে তবে তাতে যেমন কাজে লাগাতে পারে না, তেমনি উৎপাদনও ব্যাহত হয়।
পণ্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বেনাপোলের কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের শাখা আছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পায়। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে তেমন সুবিধা না থাকায় তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে বেনাপোল কাস্টম হাউজে স্বল্প পরিসরে বিএসটিআইয়ের একটি শাখা চালু হয়েছে। সেখানে কিছু পণ্যের মান পরীক্ষা করা হয়। পণ্য পরীক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ সব শাখা যাতে এখানে দ্রুত স্থাপন হয় তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।