দেশে নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ হঠাৎ করেই আশঙ্কাজনক হারে ঊর্ধ্বমুখী। ফলে রোগীর সংখ্যা যতো বাড়ছে, ততোই হাসপাতালগুলোতে শয্যা সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ শয্যা না থাকায় অনেক হাসপাতালই রোগীদের ভর্তি করতে পারছে না। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সংকটাপন্ন রোগীরা জায়গা পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও জরুরি যন্ত্রাংশও বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় দেশের ৯৬টি সরকারি ও ১৮টি বেসরকারি হাসপাতাল নিবেদিত রয়েছে। তার সঙ্গে আরো অন্তত ২০টি হাসপাতাল যুক্ত করা হচ্ছে। চালু করা হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোও। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০টি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩১০ থেকে ৩২০টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০০টি করা হচ্ছে। এতোদিন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে করোনা রোগী ছাড়াও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হতো। তবে এখন পুরো হাসপাতালটিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত করা হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেটের ১ হাজার ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারকে অস্থায়ী হাসপাতাল এবং সেখানে ৫০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা হচ্ছে। একইভাবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালকে আবারো করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে অবকাঠামোর উন্নয়ন না করে সেখানে আর শয্যা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। গত বছর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে সরকার চুক্তি করেছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরে ওই চুক্তি বাতিল করা হয়। কিন্তু এবার সংকট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিকে আবারো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এবার চিকিৎসার কোনো ব্যয় সরকার বহন করবে না। তাছাড়া রাজধানীর বাইরে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জিনজিরার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপাতালে করোনা ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তার আগে গত ২২ মার্চ রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা সেবা চালুর নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীর মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, বাবুবাজারের ঢাকা মহানগর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫৪৯টি আইসিইউ শয্যা নির্ধারিত রয়েছে। যার বেশিরভাগ শয্যাতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। রাজধানীর ১০টি সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১০৩টি আইসিইউর মধ্যে ৯৬টিতেই রোগী ভর্তি আছে। আর রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের ১৬৪টি আইসিইউ শয্যার অধিকাংশেই রোগী রয়েছে।
এদিকে করোনা রোগীর চিকিৎসা প্রসঙ্গে সরকারের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ মুহূর্তে যতোটুকু সম্ভব হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে কোনো রোগীকেই যেন ফিরে যেতে না হয়। প্রয়োজন হলে অস্থায়ী ভিত্তিতে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।
অন্যদিকে করোনা চিকিৎসায় প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে রাজধানীকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, বর্তমানে রাজধানীতে করোনা রোগীদের চাপ বেশি। ওই তুলনায় দেশের অন্য জেলাগুলোতে তেমন একটা চাপ নেই। সেজন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাসপাতালগুলোকে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোসহ অন্যান্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও সরবরাহ করতে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে বলা হয়েছে।