কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেননা মণিরামপুর উপজেলাবাসী। চিকিৎসক সংকটসহ নানা কারনেই হ-য-ব-র-ল এর মধ্যদিয়ে চলছে মণিরামপুর স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। চিকিৎসাসেবা নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে থাকলেও সাধারন জনগণ মুখ খুলতে চাচ্ছেননা। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্রটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়েছে ২০২১ সালে। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে-কলমে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এ ৪জনের মধ্যেও একজন চিকিৎসক আমিনুল বারি ইউনানী। অপর একজন চিকিৎসক আশরাফুর রহমান তিনিও রয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটিশনে। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ সামাল দিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকদের দিয়ে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে চরম চিকিৎসা সংকটে পড়েছেন মণিরামপুর উপজেলার জনসাধারন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়েছে ২০১১ সালে। কিন্তু ৫০ শয্যার রোগীদের খাদ্য ছাড়া আর কিছুই বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি গত ১০ বছরে। তিনি জানান ৫০ শয্যায় চিকিৎসক প্রাপ্তি রয়েছে ৩৬ জন। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ৪ জন। এরমধ্যে চিকিৎসক আশরাফুর রহমানকে ডেপুটিশনে দায়িত্ব পালন করছেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার, নেই গাইনী বিশেষজ্ঞ, নেই ডেন্টাল সার্জন, নেই পর্যাপ্ত প্যাথলজিষ্ট। প্যাথলজি বিভাগে ৫ জনের স্থলে আনিছুর রহমান নামে মাত্র একজনই রয়েছেন। যাকে দিয়ে করোনা রোগী থেকে সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা নিয়ে কথা হলে হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ কুমার স্বর ক্ষোভের সাথে জানান, আসলে নামেই তাল পুকুর, ঘটি ডোবেনা। এমন উদহারণ দিয়ে বলেন, উপজেলার পৌনে ৫ লক্ষাধিক জনসাধারনের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেখানে রোগীদের কোন সেবা নেই। একমাত্র চিকিৎসক মোসাব্বিরুল ইসলাম (রিফাত) যতটুকু পারছেন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। আমরা দীর্ঘ সময় পর একজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েও হাসপাতালের সমস্যার সমাধান পাচ্ছিনা। যেকারনে এসব কথা জনগণের বলার জায়গাও থাকছেনা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ডা. মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাতের পোষ্টিং উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী সামাল দিতে রিফাতকে নিয়মিতি দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে ডা. রিফাতকে নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ডা. রিফাতকে আমার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দেওয়া হলেও তিনি আদেও আসেননা এখানে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে রাজগঞ্জ এবং নেহালপুর দুটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এ দু’টির মধ্যে রাজগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সুমন গুপ্ত নামে এক চিকিৎসককে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। তবে তিনিও সেখানে নিয়মিত বসেননা বলে এলাকার ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। অপর নেহালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। যে কারনে ওই এলাকার জনসাধারনের চিকিৎসা সেবায় ভোগান্তী চরমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এ ১৫টির সবকটিতে একজন করে মেডিকেল অফিসারের পোষ্টিং দেওয়া থাকলেও সেখানে যাননা দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে এদের অনেকেই জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয়, এ কারনে ইউনিয়নে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা।
মশ্মিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক উলফাত আরা সুলতানা। তিনি তার কর্মস্থলে যাননা এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানাগেছে, যে সকল চিকিৎসককে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই যাননা তাদের কর্মস্থলে।
তবে এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা শুভ্রা রানী দেবনাথ কিছু সমস্যা রয়েছে এমন কথা স্বীকার করে জানান সমস্যাগুলি সমাধানের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যেসকল চিকিৎসককে পোষ্টিং দেওয়া হয়েছে সেখানে স্থাপনা না থাকায় সেখানে চিকিৎসকরা বসছেননা। ফলে তাদেরকে হাসপাতালে ডিউটি করানো হচ্ছে।
তবে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিনের বক্তব্যে একমত হতে পারেননি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম। তিনি বলেন, উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে বহালতবিয়দে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্থাপনা রয়েছে।