দেশব্যাপী আলোচিত ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারনাশনাল লিজিং থেকে ২৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া পলাতক পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) সহযোগি সুব্রত দাস ও শুভ্রারানী দাস দম্পতির গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরের মোবারকপুর গ্রামে। ওয়াকামা লিমিটে নামের ভূয়া কোম্পানি দেখিয়ে এই দম্পতি পিকে হালদারের সাথে মিলে মিশে ৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। যে কোম্পানির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে শুভ্রারানী দাস দুদকের হাতে আটক হয়েছেন। আটকের পর থেকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে দুদকের দাবি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবর জেনে সুব্রত দাসের স্বজনরাসহ এলাকাবাসি বিস্মিত হয়েছেন।
সুব্রত দাসের পারিবারিকভাবে তেমন অবস্থাশালী ছিলেন না। তার বাবা দুলাল হরি দাস ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি যশোরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে অবসরে যান। বছর দেড়েক আগে পরলোক গমন করেন তিনি। তার বাবা দুলাল দাস এলাকায় একজন সম্মানি ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে সুনাম রয়েছে। দুলাল দাসের দুই ছেলের মধ্যে সুব্রত দাস যিনি এলাকায় সাধন হিসেবে পরিচিত। ছোট ছেলে দেব্রত দাস তিনিও ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরী করেন। সুব্রত দাসের শ^শুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরী করতেন বলে তার স্বজনরা জানতেন। সরেজমিন সুব্রত দাসের গ্রামের বাড়িতে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।
ওয়াকামা লিমিটেড নামের ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানি থেকে সুব্রত দাস ও শুভ্রারানী দাস দম্পতি প্রায় ৯০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)-এর তদন্তে উঠে এসেছে। এই দম্পতির সাথে মোফাজ্জেল নামে আরেক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে শুভ্রারানী দাস দুদকের হাতে গত ২২ মার্চ সোমবার আটক হয়েছেন।
দুদকের তদন্তকারি এক কর্মকর্তা জানান, ওয়াকামা লিমিটেড নামের এই ভূয়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সুব্রত নিজেই এবং তার স্ত্রী শুভ্রারানী দাস কোম্পানির পরিচালক। কিন্তু ঋণ নেয়াকালে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানো হয়েছে তার কোনটিই সঠিক নয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে এই আত্মসাৎকৃত প্রায় ৯০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। টাকা পাচারের উদ্দেশ্যেই এই দম্পতি গত তিন বছরে ৫ বার আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন বলে দুদকের ধারণা। দুদকরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পিকে হালদারের সাথে মিলে মিশে এই দম্পতি বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ২২ মার্চ স্ত্রী শুভ্রারানী দাস দেশে ফিরলেও স্বামী সুব্রত দাস ফেরেননি। ওই দিনই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুভ্রারানী দাস দুদক’র হাতে আটক হন।
সুব্রত দাসের পিসি (ফুফু) হাসি রানী বসু জানান, তার বড় দাদা মৃত. দুলাল হরি দাসের দুই ছেলে সুব্রত দাস ও দেব্রত দাস দু’জনই দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। সেখানে দুই ভাই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরী করেন বলে তারা জানতেন। সুব্রত’র স্ত্রী শুভ্রা গৃহিনী বলেই জানেন তারা। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব খবর জেনে তারা বিস্মিত হয়েছেন। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা (সুব্রত-শুভ্রারানী) এমন কান্ডে জড়িত থাকতে পারে। পূজা-পার্বণে বছরে এক/দুইবার তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে।