২৮ মার্চ রোববার হেফাজতের ডাকা হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত অটোরিকশা চালক সরাইলের লিটনের (২৭) লাশ উদ্ধার করেছে স্বজনরা। নিহত হওয়ার একদিন পর গত সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। রাত ৮টায় নিজ গ্রাম সরাইলের কাটানিশারে পারিবারিক কবরস্থানে লিটনের মরদেহ দাফন করা হয়। বিয়ের মাত্র ৪ বছর পরই একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীকে হারিয়ে অন্ধকার দেখছেন লিটনের স্ত্রী। পৃথিবী বুঝার আগেই এতিম হয়ে গেলে ৩ বছর বয়সের একমাত্র ছেলে হামিম।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিটন। সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটারিশার গ্রামের মোজাম মিয়া ছেলে। লিটনরা ৪ ভাই ৪ বোন। ভাইদের মধ্যে লিটন দ্বিতীয়। অভাবের তাড়নায় বাড়ি ছেড়ে চলে যায় জেলা শহরে। ৪ বছর আগে বিয়ে করেছে লিটন। পৌর শহরের মেড্ডা খালপাড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। লিটনের রয়েছে ৩ বছর বয়সের একটি ফুটফুটে ছেলে। অটোরিকশা চালিয়ে সারা দিনে যা আয় হত তা দিয়েই চলত লিটনের সংসার। সারা দিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাসায় ফিরত। তখন লিটনের হাতে থাকত সংসারের বাজার ও শিশু সন্তানের মজা। তাই প্রতিদিনই বাবা আসার আশায় পথ চেয়ে থাকত ওই শিশুটি। বাবাকে দেখা মাত্র আনন্দে হাঁসত খেলত। ২৮ মার্চ সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হচ্ছে। লিটনের আদরের ছেলেরও অপেক্ষার পালা শেষ। বাবা আসছে না। আসছে না তার মজা। বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে শিশুটি। আর স্ত্রী বসে অপেক্ষা করছেন। রাত গভীর হওয়ার পরও যখন লিটন আসছে না। খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন লিটনের স্ত্রী। নিজের ও স্বামীর স্বজনদের বিষয়টি জানালেন। রাতেই তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ও স্বজনদের বাড়িতে খুঁজলেন। কোথাও পেলেন না লিটনকে। গত সোমবার সন্ধ্যায় সন্ধান পেলেন। লিটনের মরদেহ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে লাশ সনাক্ত করলেন তার স্ত্রী ও স্বজনরা। গুলিবিদ্ধ লিটনের তলপেট দিয়ে গুলি ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। পেটের নারিভূরি বাইরে চলে আসছে। কি যে বিভৎস দৃশ্য। সূত্র জানায়, হরতাল চলাকালে গুলিবিদ্ধ লিটনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন লোক। কিছুক্ষণ পরই লিটন মারা যায়। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে নিজ গ্রাম কাটানিশার বাজারে জানাযা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। হরতাল চির দিনের জন্য বিধবার শাড়ি পড়িয়ে দিল মাত্র ৪ বছর আগের বিয়ে হওয়া ওই স্ত্রীকে। পৃথিবী বুঝার আগেই চির দিনের জন্য এতিম করে বাবার আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করে দিল শিশু হামিমকে। শিশু হামিম ও তার মায়ের মুখের আহার কোথা থেকে আসবে। কে নিবে তাদের দায়িত্ব। মা ছেলে দুজনই তো এখন নিরূপায়। ছেলের এমন মৃত্যুকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না লিটেনের মাতা। কাঁদতে কাঁদতে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়ছেন তিনি। হেফাজত সরকার ও মোদী তারা কেউ কি পারবে হামিমের বাবাকে ফিরিয়ে দিতে ? এমন জিজ্ঞাসা এখন হামিমের স্বজনদের। লিটন সহ হরতাল কেড়ে নিল সরাইলের ২ শিশুর প্রাণ। গত রোববারেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের হাইওয়ে থানায় হামলা চালায় হরতালকারীরা। পুলিশ গুলি চালায়। কিডনি বরাবর শরীরের ডান দিকে ও বাম উরূর উপরে ২টি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সরাইল সদরের কুট্রাপাড়া গ্রামের আরেক শিশু আল-আমীন (১৪)। আল-আমীন ওই গ্রামের শফি আলীর ছেলে। শিশু আল-আমীনের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। শফি আলী ও নিহত লিটনের মা বলেন, আর যেন কোন মা বাবার বুক এভাবে খালি না করে আল্লাহ। সরকার ও হরতালকারীদের কাছে অনুরোধ মানুষ হত্যা বন্ধ করূন। মানুষ আপনাদের কাছে ভাত কাপড় চায় না। শান্তি চাই।