লাখো জনতার অংশগ্রহণে জানাযা শেষে পিতা-মাতার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং তিন বারের সংসদ সদস্য মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। বুধবার ভোর সাড়ে ৫.২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাষ্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি------রাজেউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি তিন ছেলে ও চার মেয়ে নাতী-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মামুনুল হক, মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপি নেতা মোঃ মুছা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. বশির আহম্মেদ খান, গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম ওলামাগণ।
বুধবার মাগরিববাদ নিজ গ্রাম বিজয়রামপুরে তারঁ হাতে গড়া জামেয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর কওমি মাদ্রাসা ময়দানে সর্বস্তরের লাখো জনতার উপস্থিতিতে জানাযা শেষে পিতা-মাতার কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত সকাল থেকেই জানাযার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখো জনতা মরহুমের বাড়িতে ছুটে আসেন এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
মরহুমের বড় সন্তান মুফতি আবদুল রশিদ জানান, তিনি হার্ড, কিডনি এবং ফুসফুসজনিত রোগে ভূগছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২২ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে নেওয়া হয় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রেলিভার ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) নিবিড় পর্যর্বেক্ষণে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মুফতি ওয়াক্কাস কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সহ-সভাপতি ও হেফাজত ইসলামের সাবেক নায়েবে আমীর এবং বর্তমানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে কেন্দ্রীয় একাংশের চেয়ারম্যান এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ইমদাদীয়া মাদানীনগর কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
জানা যায়, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ১৯৫২ সালের ১লা নভেম্বর যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মোহাম্মদ ইসহাক মোড়ল ছিলেন একজন কৃষক। স্থানীয় সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে লাউড়ী রামনগর কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তার প্রখর মেধা ও দ্বীনি শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে মাদ্রাসার তৎকালিন সুপারন্টিডেন্ট হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইনের নেক নজরে পড়েন।
এক পর্যায় হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইন সাহেবের বায়াত নিয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। তিনি ( মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইন সাহেব) ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারি। মুফতি ওয়াক্কাসও দেওবন্দ ভাবাপন্ন হয়ে উঠেন। এই মাদ্রাসা হতে মাদ্রাসা বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান করে দাখিল, আলিম ও ফাজিল পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মাদারিপুর জেলার বাহাদুরপুর শরীয়তীয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে প্রথম শ্রেনিতে কামিল পাশ করেন।
১৯৭২ সালে মণিরামপুর ডিগ্রী কলেজ (বর্তমান সরকারি) থেকে এইসএসসি পাশ করে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে মওকুপ আলাইহি, দাওরায়ে হাদিস, তাকমিলে দ্বীনিয়াত ও মেধা তালিকায় প্রথম স্থান করে ইফতা পাশ করেন। বাড়িতে ফিরে এলে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অনুরোধে ও হযরত মাওঃ তাজাম্মুল হুসাইনের সম্মতি নিয়ে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়।
তৎকালিন শাসক দল জাতীয়পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রথমে জাতীয় সংসদের হুইপ এবং পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন। পরে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোট হলে তিনি ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ফের এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।