কুড়িগ্রাম জেলাধীন রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড় চরাঞ্চলে তেল জাতীয় ফসল চিনার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কম খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেলে প্রতি একর প্রায় লক্ষ টাকা লাভ হবে চিনা চাষীদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরশৌলমারী, বন্দবেড় ,সাজাইয়ের চর,কীর্তনতারীর চর ও যাদুরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে চরাঞ্চলে ৮০ হেক্টর থেকে ৯০ হেক্টর জমিতে চিনা চাষ হয়েছে। বালু মাটিতে চিনা চাষ হয়, বন্যা পানি শুকানোর সাথে সাথে চিনা চাষাবাদ যায়।
সরে জমিনে জানা যায়, চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস কৃষি চাষাবাদ ও মাছ ধরা। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে গ্রামবাসী নদী ভাঙ্গনের ফলে ফসলী জমি ও ভিটা মাটি হারিয়ে বালুরচরে ঘর বেঁধে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা চিনা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চিনার চাষ ভালো হয়েছে।
কুটিরচর গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম, সেকান্দার আলী বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে চিনা চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে পনের শত টাকা থেকে ২হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ১৮ মণ। বাজারে এক মণ চিনা’র দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা যাবে। এক বিঘার চিনা ফসল বিক্রয় করে আমার লাভ হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
ফলুয়ারচর গ্রামের কৃষক রিয়াজুল হক জানান, চরের বালু মিশ্রিত জমিতে অন্য ফসলের তুলনায় চিনা’র চাষ ভালো হয়। চিনা চাষে খরচ কম, সামান্য সেচ দিলে ফলন আরো বেশি ভালো হয়। রাসায়নিক কোনো সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে পাওয়া যায় আশাতীত ফলন। চিনা চাষে পরিশ্রম কম ও লাভ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় চিনা চাষ চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে। এবার চরাঞ্চলে পাঁচশত বিঘা জমিতে চিনা’র আবাদ হয়েছে।
সিএসডিকে এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মো. আবু হানিফ মাস্টার বলেন, আমার চরাঞ্চলের কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে অর্থকরী ফসল চিনা, কাউন, বাদাম, মাষকালাই, মুসুর ডালসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানসহ কৃষি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠান করে কৃষির টেকসই উন্নয়নে কাজ করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম রায়হান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড় চরাঞ্চলের বালু মাটি চিনা চাষের জন্য খুব উপযোগী। বাণিজ্যিক ভাবে চিনার চাষের উদ্যোগ গ্রহন করলে বদলে যেতে পারে চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকের ভাগ্য। চিনা তেল জাতীয় একটি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। চিনা তেল, আমিষ ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করে। চিনা খুব স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার। চরাঞ্চলে চিনাসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছি।