পুলিশের গুলিতে দুই জনের মৃত্যু ও জনৈক মাওলানা গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে হামলা চালানো হয় ফরিদপুরের সালথার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। সোমবার (০৫ মার্চ) রাত ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্র পরিনত হয়।
মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলাকারিরা তিন ঘন্টা ব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা কমপ্লেক্স এর গাছপালা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সহ নানা স্থাপনা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা থানা পুলিশের পাশা-পাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ সদস্য সহ র্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২ টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি সোড়ে।
এসময় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্য সহ আহত হন কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে স্থানীয় রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আশরাফ আলীর ছেলে হাফেজ জুবায়ের হোসেন (২৫) নামের এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যাক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় করোনা ঠেকাতে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সে সময় চা পান করতে আসা জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। এই ঘটনার জেরে পরে ফুকরা বাজারে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের বাকবিতন্ডা হয়। এরপর সেখানে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়।
পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুই জনের মৃত্যু ও জনৈক মাওলানাকে গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। পরে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্র পরিনত হয়।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা পালন করতে ওই বাজারে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি)। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এমতবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে পুলিশের একটি দল পাঠান। পুলিশ যাওয়ার পর স্থানীয়দের সাথে পুলিশের বাক বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশের এস আই মিজানুর রহমানের উপর হামলা চালান স্থানীয়রা। হামলায় মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়।
তিনি আরো বলেন, এ সময় স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুই জনের মৃত্যু ও জনৈক মাওলানাকে গ্রেপ্তারের পর তাকে মারপিট করা হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। পরে আমার বাসভবন, উপজেলা পরিষদ, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় আমার গাড়ী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, আমার বাসভবন সহ বিভিন্ন অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার সাথে কর্মকর্তাদের ভুলবোঝাবুঝি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা মিজানুর নামে এক এস আইকে মারপিট করে। এরপর তারা গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন সহ বিভিন্ন অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
তিনি আরো বলেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলাকারিরা তিন ঘন্টা ব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা কমপ্লেক্স এর গাছপালা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সহ নানা স্থাপনা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। রাষ্ট্রিয় সম্পদ রক্ষার্থে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা থানা পুলিশের পাশা-পাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ সদস্য সহ র্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২ টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি সোড়ে।
তিনি বলেন, আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্য সহ আহত হন কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে স্থানীয় রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আশরাফ আলীর ছেলে হাফেজ জুবায়ের হোসেন (২৫) নামের এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনি আরো বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।