সরাইলে লকডাউন চলাকালে গত দুই দিনই সকাল থেকে মাঠে ছিলেন ইউএনও ও এসিল্যান্ড। তারা পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমান আদালত। কিন্তু ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের লকডাউন আর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের লকডাউনের তফাৎ আকাশ-পাতাল। ২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনার ভয়ে কাঁপতো এ জনপদের মানুষ। সময়ও ছিল লম্বা। অধিকাংশ সময় মাঠে ছিল পুলিশ। টহল দিতেন সেনা সদস্যরা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে যেত না কেউ। দিনের বেলায় সড়ক থাকত ফাঁকা। রাতের সরাইল ছিল ভূঁতরে নগরী। পাড়ায় মহল্লায় বেরিকেট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল যানবাহন ও অপরিচিত লোকজনের প্রবেশ। ঘোষণা দিয়ে কেউ কারো বাড়িতে যেত না। স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। অনেকেই ব্যবহার করতেন পিপিই। রোগী সনাক্ত হলেই দৌঁড়ে যেত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন। হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন ছিল বাধ্যতামূলক। তদবির করে অনেকেই থাকতেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। প্রতিদিনই হত নিরীক্ষা। আক্রান্ত ও নিরীক্ষার সংখ্যাও জানা যেত নিয়মিত। তখনও কিছু লোক বলতেন, মাস্ক করোনা থেকে রক্ষা করতে পারবে না। রক্ষা করবেন আল্লাহ। ২১ খ্রিষ্টাব্দে সরাইলে লকডাউনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই লকডাউন যেন কোন ভাবেই মানতে পারছেন না সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়িরা। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত সোমবার থেকে ৭ দিনের লকডাউন শুরূ হয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে ঢিলেঢালা ভাবে। সকাল থেকেই সড়ক মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহনের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সুযোগে ব্যাটারি চালিত ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে চলেছে। চলেছে দূরপাল্লার কিছু বাস ও কোচ। সরাইলের বিশ্বরোড মোড় এলাকায় কিছু মাইক্রো ও প্রাইভেট কার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। তবে ভাড়া দ্বিগুণ। ২৫০ টাকার ভাড়া লকডাউনের সুযোগে আদায় করছে ৫০০ টাকা। যাত্রী বসছে গিজাগিজি করে। ইট বোঝায় অনুমোদন বিহীন ট্রাক্টর ও চলছে সড়কে। নিবন্ধন বিহীন মোটরবাইকে চলছে ৩ জন করে আরোহী। সকল প্রকার কাজই একত্রে করছে শ্রমিকরা। বাড়ি নির্মাণ ও ছাঁদ ঢালাই চলছে নির্বিঘেœ। চলছে প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং। একেক ব্যাচে রয়েছে এক সাথে স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী। সাধারণ মানুষের চলাফেরাও আছে স্বাভাবিক। মাস্ক ছিল না অধিকাংশ মানুষের মুখে। মহাসড়কের অনেক জায়গায় মাস্ক ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে পুলিশকে। খোলা মাঠে বাজার বসার সরকারি নির্দেশনা মানতে চাচ্ছেন না অনেক ব্যবসায়ি। উপজেলা সদর থেকে শুরূ করে প্রত্যেক ইউনিয়নে এখনো আগের অবস্থায়ই চলছে বাজার গুলো। সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। লকডাউনকে ঘিরে সরাইলের ছোট বড় সকল ব্যবসায়িদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও কিছু ব্যবসায়ি দোকানের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। সুযোগ মত দোকান খুলে মালামাল বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ি বলেন, বছরে শুধুমাত্র রমজানের ঈদ-ই আমাদের ব্যবসার মূল সময়। গত বছরও আমরা রমজানের ঈদে লকডাউনে পড়েছি। এবারও রমজানের ঠিক আগে লকডাউন শুরূ হয়েছে। শেষ হবে কবে আল্লাহই জানেন। এবারও যদি দোকান বন্ধ রাখতে হয় তবে না খেয়ে মারা যাব। গত দুইদিনে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা প্রিয়াংকা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দোকান খোলা রাখার দায়ে কালিকচ্ছ, রসুলপুর ও গুণারা এলাকার ৬ ব্যবসায়িকে মোট ১০ হাজার জরিমানা করেছেন। আর গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন-২০১৮) আইনে ৩ ব্যক্তিকে ১০ হাজার ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। ইউএনও বলেন, লকডাউন চলাকালে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদন্ড অব্যাহত থাকবে।