মাদকসহ আসামি ধরা পড়ার পর তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও সাক্ষীর অভাবে আসামিরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকেই এক রকম বিনা বিচারে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসামিরা আবারো একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সদিচ্ছা। মূলত অধিকাংশ মাদক মামলাতেই রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাক্ষীর অভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকেই আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এমন শতাধিক মামলার তালিকা রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সম্প্রতি পুলিশ হেড কোয়াটার্স ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর ঘটনাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ আসামিই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আদেশে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে ব্যর্থ বললেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দায় নিতে নারাজ। বরং আইনজীবীরা পুলিশের ওপর দায় চাপিয়ে জানান, প্রসিকিউশনই শুধু রাষ্ট্রপক্ষ না। পুলিশও রাষ্ট্রপক্ষের অংশ। তাদেরই সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব।
সূত্র জানায়, যেসব মাদক মামলার সাক্ষী পুলিশ, তাকে না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আর পুলিশ সাক্ষীদের মতে, তারা আদালতের হাজির হওয়ার সমন পেলে অবশ্যই হাজির হতে বাধ্য। আদালতে সাক্ষী হাজির না করতে পারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতম দিক বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, যথাযথ সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে তিন-চতুর্থাংশ ফৌজদারি মামলার আসামি খালাস পেয়ে যায়। পুলিশ সাক্ষী নিজে উপস্থিত হওয়া এবং অন্য সাক্ষীকে উপস্থিত করা, এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি না থাকার কারণে ফৌজদারি মামলাগুলো অর্থহীন হয়ে যায়। তাই সাক্ষী হাজির করার বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি করা জরুরি।
এদিকে সাক্ষী হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ আদালতের এমন আদেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু জানান, রাষ্ট্রপক্ষ বলতে শুধু প্রসিকিউশনকে বুঝায় না। পুলিশও রাষ্ট্রপক্ষের একটি অংশ। মূলত সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সমন বাস্তবায়ন করে। তাই পুলিশের সাক্ষীদের হাজির করার দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হবে।
অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাক্ষীদের হাজিরের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হায়দার আলী খান জানান, আদালত থেকে সমন অথবা কোনো নির্দেশনা পুলিশের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা হয়। তারপরও যদি কারো বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গ করার খবর পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।