করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। ফলে হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম বন্দরে কমে গেছে পণ্য খালাসের পরিমাণ। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন চাল, ডাল, তেল, গম, ছোলা, খেজুরসহ রমজানের পণ্য নিয়ে আসা কয়েক লাখ টন পণ্য পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে করে আনা আপেল, কমলা, আঙুরসহ নানা ধরনের ফলমূলও পড়ে আছে। যদিও বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর খোলা রাখা হয়েছে, কিন্তু লকডাউনের প্রভাবে কমে গেছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। অথচ রমজান সামনে রেখে গত ১৫ দিনে বিপুল সংখ্যক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ১ এপ্রিল বন্দরের বহির্নোঙরে আসে ৪৫টি জাহাজ। তার মধ্যে ১০টি জাহাজে প্রায় পাঁচ লাখ টন ভোগ্যপণ্য রয়েছে। ওই জাহাজগুলো এখনও পণ্য খালাস শেষ করতে পারেনি। তার মধ্যে দুটি জাহাজে চিনি তৈরির কাঁচামাল আছে। আর ১ এপ্রিল আসা একটি জাহাজে আছে ৫৫ হাজার ৫০০ টন চিনি। একই দিন আসা আরেকটি জাহাজে আছে ৫৪ হাজার ১৪ টন চিনি। বন্দরে এখন ভোজ্যতেলের ৩টি জাহাজ রয়েছে। ১ এপ্রিল আসা ওই ৩টি জাহাজে ভোজ্যতেল রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। গমবোঝাই ৫টি জাহাজে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টন পণ্য। ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫টি জাহাজ এলেও ২ এপ্রিল এসেছে ১৪টি জাহাজ। ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল এসেছে যথাক্রমে ৩টি, ৮টি ও ২টি। আগামী ১৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে আরো অর্ধশত জাহাজ আসবে।চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রমজানের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। লকডাউনে মানুষের চলাফেরা ও গাড়ি চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য প্রথমে পাইকারি মোকামগুলোতে যায়। সেখান থেকে যায় সারাদেশে। পাইকারি মোকামে সীমিত আকারে ভোগ্যপণ্যের কিছু দোকান খোলা থাকলেও বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ রয়েছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত থাকলেও লকডাউনে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পাইকারি মোকামে বিক্রি কমে যাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাক্সিক্ষত হারে পণ্য খালাস করছে না। ফলে বন্দর সীমায় এখন বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে শতাধিক জাহাজ ভাসছে। ওসব জাহাজে রয়েছে রমজানের পণ্যও। বাজার ধরতে রমজানের আগেই ব্যবসায়ীরা ওসব পণ্য দেশে এনেছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাদের ছক এলোমেলো হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, রমজানের আগমুহূর্তে এই লকডাউন ব্যবসায়ীদের আবারো বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি করবে। যদি সীমিত পরিসরে হলেও পাইকারি মোকাম খোলা থাকে এবং পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো যাবে। বন্দরে এখনো বিপুল পরিমাণ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো বিপণন করতে যাতে কোথাও বাধার মুখোমুখি না হয় এবং শ্রমিকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে পারে সে ব্যপারে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের কোনো বাধা নেই। কিন্তু লকডাউনের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। রমজানের আগে পাইকারি মোকামে পণ্য বেচাকেনার হিড়িক থাকে। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে সেখানেও সেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে না। আবার পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গুদামে পণ্য নিতে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে খালাস প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলে পণ্য খালাসের পরিমাণও বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম জানান, লকডাউনের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। রমজানের পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্য খালাসে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয় সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু পরিবহন সংকটের কারণে খালাস কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।