প্রতি বছর দোলের ১২ দিন পর মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথীতে পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা স্নান ঘাটে, গঙ্গার শাখা নদী গুমানীতে গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকেই প্রায় শুকিয়ে যাওয়া গুমানী নদীতে এই স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
পাবনা,নাটোর,সিরাজগঞ্জ,বগুড়াসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূর্ণার্থীরা আসেন এই স্নানোৎসবে। এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সীমিত পরিসরে করকোলায় বারুণীর গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠিত হয়। শত শত শিশু,কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অংশ নেন এ স্নানোৎসবে।
শুক্রবার সকাল থেকেই নদীর ঘাট ঢাক ঢোলের বাজনা আর উলুধ্বনীতে মুখরিত হয়ে ওঠে। কেউবা মন্ত্র জপেছেন। কেউ সূর্য দেবতাকে উদ্দেশ্য করে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছেন। ৫ জন পুরোহিত সারি বেধে বসেন নদীর পাড় ঘেঁষে। কেউ ব্যস্ত অর্ঘ সাজাতে। কেউ স্নান করছেন আবার কেউ স্নান সেরে পাশর্^বর্তী অস্থায়ী তাবুতে কাপড় ছেড়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। বসেছিল স্বল্প পরিসরে মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এলাকার অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসে নদীর ঘাটের মেলা থেকে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনেছেন।
চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার শাখা নদী গুমানীতে প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী বারুনীর গঙ্গাস্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে নদীর ঘাটে মেলা বসে। এ মেলায় জামাই পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, জিলাপী, পাপড়, আইসক্রিম, ঘোলসহ অন্যান্য খাবার, দা, বটি, খুন্তি, ছুড়ি, মাটির তৈরী হরেক রকম পুতুল, মাটির তৈরি ব্যাংকসহ গৃহকার্যে ব্যবহৃত নানান ধরণের উপকরণ পাওয়া যায়। দুধ থেকে তৈরী ঘোল মেলায় যোগ করে বাড়তি আকর্ষণ। মেলার অদূরে করকোলা ঋষি পল্লী। এ মেলা উপলক্ষ্যে ঋষি পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রতি বছর এ সময় ঋষিদের মেয়ে জামাইরা নায়রে আসে। বেড়াতে আসেন অন্যান্য আত্মীয় স্বজনও।
গঙ্গা স্নান প্রসঙ্গে স্নান ঘাটে চাটমোহর পৌর সদরের শিক্ষক জন্মেঞ্জয় সাধন জানান, “আমাদের পূর্ব পূরুষদের কাছে শুনেছি গঙ্গা স্নানের মাধ্যমে পাপ ধুয়ে মুছে যায়। পাপ মোচন ও পূণ্য লাভের আশায় আমরা গঙ্গা স্নান করে থাকি”। রুপসী গ্রামের অনীল কুমার জানান, “ আমাদের পাপ মোচন ও মনের বাসনা যেন পূর্ণ হয় এ আশায় আমরা গঙ্গা স্নান করে থাকি। নিজেদের শুদ্ধ করি। হিংসা বিদ্বেষ ভূলে আমরা এক কাতারে সামিল হই”।
করকোলা গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের প্রধান খিতিশ চন্দ্র দাস বলেন, “প্রায় চারশত বছর যাবত করকোলা গ্রামে গঙ্গা স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এখানে আমরা গঙ্গা দেবীর পূজা ও করে থাকি। পাশের ঋষি পল্লীতে তিন দিনব্যাপী কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়”। বারুণীর গঙ্গা স্নান ও মেলা প্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নিমাইচড়া ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ডাঃ সুনীল কুমার সুত্রধর জানান, মূলত পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বারুণীর গঙ্গা স্নান করে থাকেন। প্রতি বছর দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ এ গঙ্গা স্নানে অংশগ্রহণ করলেও এবার সীমিত পরিসরে এ উৎসব পালিত হচ্ছে।
তবে একসময় এ এলাকায় সাড়ম্বরে বারুণীর গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হলেও নানা কারণে এখন তার জৌলুস হারাতে বসেছে।