রাজশাহীতে আনসার বাহিনীর সদস্য মিজানুর রহমান মিজান (৩০) হত্যার ঘটনায় বন্ধু মাধব কুমারকে (৩৬) আটক করেছে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকান্ড অতিবাহিতের মাত্র তিন ঘন্টার মাথায় হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো রেকর্ড করলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরীতে অপরাধ কর্মকা- পরিচালনা করে অপরাধীরা পালাতে না পারার বিষয়টি এখন নগরবাসীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
নিহত মিজানুর রহমান আনসার বাহিনীর হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসেও তিনি আনসার বাহিনীর দলে ছিলেন। খেলা শেষে ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেই তিনি হত্যাকা-ের শিকার হলেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস রোববার দুপুরে জানান, মিজানুরের মৃত্যুর পর পালিয়ে যাচ্ছিলেন মাধব। তখন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুঠিয়া থেকে আটক করা হয়। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা মাধবের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ তোলার পরই তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযানে নেমেছিল আরএমপি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আরএমপির মুখপাত্র জানান, শনিবার রাত ৮ টার দিকে মহানগরীর হেতেমখাঁ এলাকায় ওয়াসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ভেতর আনসারদের একটি কোয়ার্টারের সামনে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। নিহত মিজানুর রহমান মহানগরীর হেতেম খাঁ সবজিপাড়া এলাকার মো. মন্টুর ছেলে।
আর গ্রেফতারকৃত মাধব কুমারের বাড়িও একই এলাকায়। তিনি মিজানুরের বন্ধু ছিলেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও মাধবের বিরুদ্ধে সুদ ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
হত্যাকান্ডের বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, হেতেমখাঁ এলাকায় ওয়াসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাশে থাকা দোকানী রেজাকে লকডাউন চলার কারণে লাইট বন্ধ করে ব্যবসা করতে বলেছিলেন মিজানুর। কিন্তু কেন লাইট বন্ধ করে ববসা করতে হবে এমন প্রশ্ন তুলে মিজানুরের সঙ্গে তর্কে জড়ান মাধব। এ সময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে অন্যরা থামিয়ে দেয়।
এরপর মিজানুর প্লান্টের ভেতরে আনসারদের কোয়ার্টারের সামনে সেখানকার সদস্যদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় আচমকা মাধব গিয়ে মিজানুরকে ছুরিকাঘাত করেন। এরপর মাধবসহ আরও কয়েকজন মিলে মিজানুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানুরকে মৃত ঘোষণা করলে মাধব পালিয়ে যান।
আর মিজানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাধবের বাড়িতে হামলার প্রস্তুতিও নেন। এ সময় কেউ কেউ গিয়ে মাধবের বাড়ির গেট ধাক্কাধাক্কি করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ফলে বিষয়টি আর বড় আকার ধারণ করতে পারেনি। হত্যাকা-ের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত মিজানুরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দুপুরের আগেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।