জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার ভোর চারটার দিকে উলানিয়া ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম সুলতানী গ্রামে হামলা ও সংঘর্ষের সময় ১০টি বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করে লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোববার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ উভয়পক্ষের আটজনকে আটক করেছেন।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরীর সমর্থক (চাচাতো ভাই) সাঈদ চৌধুরী (২২) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তারের সমর্থক সাইফুল সরদার (২৮)।
নিহত সাইফুল সরদার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের আশা গ্রামের আবদুল জব্বারের পুত্র এবং সাঈদ চৌধুরী একই ইউনিয়নের পশ্চিম সুলতানী গ্রামের কাইয়ুম চৌধুরীর পুত্র। সংঘর্ষে গুরুত্বর আহতরা হলেন-রুমা আক্তারের সমর্থক হাবু সরদার, জহিরুল ইসলাম, রতন সরদার, আবদুল হালিম মিলন চৌধুরীর সমর্থক অহিদ হাওলাদার ও হাসান আলী হাওলাদার।
নিহত সাইফুল সরদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তারের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। তার স্বামী সাইফুল সরদার রুমা আক্তারের সমর্থক ছিলেন।
তিনি (খাদিজা) আরও বলেন, রোববার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী তার সমর্থক মিজান মোল্লা ও নোমান মোল্লার নেতৃত্বে শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্ব সুলতানী গ্রামে রুমা আক্তারের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। হামলাকারীরা একাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় তার স্বামী সাইফুলসহ অন্যান্যরা মিলন চৌধুরীর সমর্থক হামলাকারী অহিদ হাওলাদার ও হাসান আলীকে ধরে ফেলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা সাইফুল সরদারকে কালীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এলকায় ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রথমে স্বতন্ত্র প্রার্থী রুমা আক্তারের সমর্থকরা তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তার চাচাতো ভাই সাঈদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন সমর্থক আহত হন। সকালে তার আহত চাচাতো ভাই সাঈদ চৌধুরীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাঈদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, নিহত দুইজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উভয়পক্ষের আটজনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই দুই গ্রামে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। তবে সীমানা নিয়ে জটিলতার কারণে গত ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ওই দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করে। নির্বাচন স্থগিত করলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তারের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক বার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।