মাঠের পর মাঠে সবুজের সমারোহ। সেই সবুজ মাঠে দেখা দিয়েছে ধানের শীষ। সবুজ আভা কেটে হলুদ বরণ ধারণ করতে শুরু করেছে ধানের গাছগুলো। ধানগাছের সোনালী শীষে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকার কৃষক।
কৃষকরা বলছেন ধানের চারা রোপণ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। এ কারণে ধানখেতে রোগ-বালাই ছিল কম। ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্য মাত্রায় চেয়ে ২৪০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল হীরা, তেজ, গোল্ড জাতের চাষ হয়েছে ২ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। সরকার হাইব্রীড জাতের ওপর প্রণোদনা দেওয়ায় গতবছরের তুলনায় ৮২৫ হেক্টর বেশি জমিতে এ ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা।
সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এবছর ব্রি ধান-২৮, ২৯, ৮১, ৮৯ ও জিরাশাইল ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশি চাষ হয়েছে ব্রি ধান-২৮ ও জিরাশাইল ধানের। কিছুকিছু মাঠে এবছর ব্রি ধান-৮১ জাত চাষ করেছেন কৃষক।
উপজেলার বাদলঘাটা গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ, বিলকরিল্যা গ্রামের মসলেম উদ্দিন, ঘোনা গ্রামের মমতাজ সরদারসহ আরও অনেকে জানান, ধানের চারা রোপণের পর থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। সেচকাজে কোনো রকম বিঘœ ঘটেনি। মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ না করায় খেতে মাজরা পোকাসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ ছিল কম। পচন ও নেকব্লাস্ট রোগের আক্রমণ নেই বললেই চলে। এজন্য জমিতে দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি।
কৃষকরা আরও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আগাম রোপণকৃত ধান ৮-১০ দিনের মধ্যে কাটামাড়াই শুরু হবে। কাটামাড়াই পুরোদমে শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ লাগতে পারে। এ সময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে তারা বলেন, ঝড়ো আবহাওয়া ও শিলাবৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়ে কৃষকরা মাঠে রয়েছেন। স্বপ্নের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে এ ফসলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জানান, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলেও আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। ধানের রোগ-বালাই অনেকটা কম। এজন্য কীটনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়েছে কৃষকদের।
তিনি আরও বলেন, এ সময় রাত ও দিনের তাপমাত্রা উঠানামা করছে। এটি অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। কোনো কোনো সময় দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। এটি অব্যাহত থাকলে ধানের শীষ হিটশকে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য কৃষকদের সবরকম পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ আবাদ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।