পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন ও বাংলা নববর্ষের সূচনা দিবসে ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন চলছে সারাদেশে। ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস এর ব্যাপক সংক্রমণের জন্য এ লকডাউন। দেশের দূরপাল্লার গাড়ি সহ স্থানীয় টাউন সার্ভিসের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সরকারি অফিস-আদালত ও বেসরকারি ও শ্বায়িত্ব শাসিত সব দপ্তর পরিদপ্তর বন্ধ থাকলেও কলকারখানা খোলা রয়েছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল শ্রমিকদের কারখানায় আনা নেয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থায় দেখা গেল অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা করেনি। ফলে শ্রমিকদের পথের নানা ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলা করে বেশি ভাড়া দিয়ে কারখানায় আসতে হচ্ছে।
লকডাউন চলাকালে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না বলা হয়েছে। জরুরি অবস্থায় পুলিশের মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করে বেড়োতে হবে। জরুরী সেবাদান প্রতিষ্ঠানে ঘোষণার বাইরে বলা হলেও চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে পথে অসৌজন্য আচরণ করেছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তারা তাদের পরিচয় পত্র প্রদর্শন করলেও পুলিশ সদস্যদের নানা টীকাটিপ্পনী সহ্য করতে হয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেছে। অন্যদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কোন পুলিশ সদস্য অপেশাদারী আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। তবে চিকিৎসক ও সাংবাদিক নিগৃহীত হবার অনেক অভিযোগ ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তার একটি ঘটনার তদন্ত হতে দেখা যায়নি।
জনগণ সরকারি ঘোষণা যথাযথভাবে পালন করার জন্য নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে যারা তাদের প্রয়োজন যথাযথ নয় বা মুভমেন্ট পাস প্রদর্শন করতে পারেননি তাদের জরিমানার টাকা গুনতে হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা অনেকেই বলছেন মুভমেন্ট পাস পাওয়ার জন্য যে অ্যাপসটি চালু করা হয়েছে সেখানে শত চেষ্টা করেও ঢোকা যায় না। আবার কেউ কেউ বলছেন খুব সহজেই এই অ্যাপসে ঢুকে মাত্র ৪/৫ মিনিটের মধ্যে মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করা সম্ভব। নিত্যপণ্যের বাজার সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়াবাড়ির কথা শোনা গেছে। এজন্য ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতেও দেখা গেছে যা পুলিশের উব্ধর্তন কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করতে হয়েছে। তবে বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করছে ক্রেতারা। পণ্য পরিবহনে কোন বাঁধা না থাকলেও কেন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে তা কেউ বলতে পারছে না। অন্যদিকে চট্টগ্রামে মসজিদে প্রবেশ নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সরকারি ঘোষণায় প্রতি মসজিদে ২০ জনের বেশি মুসল্লি জামায়াতে অংশ নিতে পারবেন না বলা হয়েছে। আর তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশ কিছু মুসল্লি আহত হয়েছেন এবং পুলিশের মামলায় আসামি হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রতিদিন সংক্রমণের হার বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু-মিছিল। হাসপাতালে হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। নিতান্ত কম নয় কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম মনে হচ্ছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় বসুন্ধরা ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে ২৫০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটা উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, শুধু অনুন্নত দেশে দেশে নয়, অনেক উন্নত দেশের পক্ষেও এত অল্প সময়ে এত বড় হাসপাতাল বানানো সম্ভব নয়। আমরা পেরেছি। আজ জরুরী সময় সে হাসপাতালের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটের উপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিও। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এখন করোনার কারণে মৃতদের গোরখোদকদের পক্ষে আর নিজ হাতে কবর খোঁড়া সম্ভব হচ্ছে না। তারা এখন মেশিন দিয়ে দ্রুততম সময়ে কবর খুঁড়ছেন। রায়ের বাজার কবরস্থানে এখন গোরখোদকরা মেশিন দিয়ে কবর খুঁড়ছেন। প্রতিদিন এখন তাদের ২০টি কবর খুঁড়তে হচ্ছে। যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। মৃত্যুর মিছিল হয়তো একসময় থামবে, বিদায় নেবে করোনা। কিন্তু যারা স্বজন হারালেন তারা কি করে ভুলবেন শোক। সরকার লকডাউন দিয়ে যত কড়াকড়ি করুক না কেন জনসচেতনতা না বাড়ালেও করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্য কোন পথ নেই। তাই আজ প্রশ্ন উঠেছে জীবন আগে না জীবিকা আগে!