রাজধানীর চারপাশে নৌপথে যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ ওয়াটার বাস সার্ভিস দীর্ঘদিনেও সফলতার মুখ দেখছে না। তারপরও ওই সার্ভিসে যুক্ত করা হচ্ছে আরো ওয়াটার বাস। মূলত বিগত ২০০৪ সালে নৌপথে রাজধানী ঢাকার চারপাশে যাত্রী পরিবহনে একটি ওয়াটার ট্যাক্সি প্রথম নামানো হয়। তারপর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডাব্লিউটিসি) বিগত ২০১০ সালের আগস্টে দুটি নৌযান দিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করে। কিন্তু ৩ বছরে কোনো সফলতার মুখ না দেখলেও ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আরো ৪টি ওয়াটার বাস নামানো হয়। নানা অজুহাতে বন্ধ থাকা ওই সার্ভিস ধুঁকতে থাকলেও ২০১৫ সালে যুক্ত করা হয় আরো ৪টি ওয়াটার বাস। পরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতেও ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কোনো জরিপ না চালিয়ে একের পর এক এমন সব পদক্ষেপে শুধু ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর ওয়াটার বাসগুলো বুড়িগঙ্গার বাদামতলী ঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করার কথা ছিল। কিন্তুনানা বাধায় বাস্তবে তা আর সচল থাকেনি। ক্রমে ক্রমে ১০টি ওয়াটার বাসের বেশির ভাগই বর্তমানে অচল। যে কয়েকটি সচল আছে সেগুলোও সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জের মধ্যে বুড়িগঙ্গার এপার-ওপার ৫ টাকা ভাড়ায় যাত্রী টানছে। যদিও বিআইডাব্লিউটিসি শুরু থেকেই এই সার্ভিসের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের যুক্তি ছিল, বিদ্যমান নৌপথ ওয়াটার বাস চলার উপযোগী নয়। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত নৌ রুটে চলা ওয়াটার বাস যাত্রীদের কোনো উপকারেই আসেনি। কথা ছিল বাদামতলী ঘাট থেকে যাত্রা করে খোলামোড়া, সোয়ারীঘাট, বসিলা ও রায়েরবাজারে যাত্রী ওঠানামা করা হবে। যাত্রাপথে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের ভাড়া হবে ১৫ টাকা। কিন্তু দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রী না পাওয়া, অতিরিক্ত তেল খরচ, নদীর পাড় ভেঙে যাওয়া, নাব্যতা ঠিক না থাকা এমন নানা অজুহাত তুলতে থাকে। পাশাপাশি যাত্রীদের অভিযোগে সময়মতো বাস না মেলা, ধীরগতি, পর্যাপ্ত বাস না থাকা, সুবিধাজনক স্থানে নামার সুযোগ না থাকা, অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা সমস্যা উঠে আসে। সংশ্লিষ্টদের মতে, নদীদূষণ রোধ এবং ল্যান্ডিং স্টেশন, ওয়াকওয়ে, বনায়ন, নদীপারের সৌন্দর্যবর্ধন ও নৌঘাট থেকে শহরে চলাচলের যানবাহনের ব্যবস্থা না করার কারণেই এ উদ্যোগটি ভেস্তে গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়াটার বাস সার্ভিসের বেশিরভাগ ওয়াটার বাসের অবস্থাই নাজুক। ওয়াটার বাস-৯ অচল। ৪৫ আসনের ওই ওয়াটার বাসটির ভেতরে কোনো আসনই অবশিষ্ট নেই। তাছাড়া ওয়াটার বাস-৩, ১১, ১২ সহ ৬টি বাসকেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। যারা ওয়াটার বাসগুলো ভাড়া নিয়েছিল তারাও তা ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ ওয়াটার বাসই কেরানীগঞ্জে ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে।
সূত্র আরো জানায়, ওয়াটার বাস সার্ভিসটি যাত্রীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। বলা যায় যাত্রী না পাওয়ার কারণে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে ৫ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে এবং তা ওয়াটার বাসের আগেই গন্তব্যে যায়। তাছাড়া বাসের যাত্রীরা যেখানে মন চায় সেখানেই নেমে যেতে পারে। কিন্তু ওয়াটার বাস নির্দিষ্ট ঘাট পন্টুন ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াটার বাসগুলো অন্যভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ওয়াটার বাস সার্ভিস সম্পর্কে বিআইডাব্লিউটিসির যাত্রীসেবা ইউনিটের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, সার্ভিসের সবকটি ওয়াটার বাস নষ্ট নয়। ৪টি মেরামতে আছে। চট্টগ্রামে দুটি বাস চলতো। তার মধ্যে একটি মেরামতে আছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআইডাব্লিউটিসির যাত্রী ও প্রশাসন জিএম (কমার্স) শেখ মু. নাসিম জানান, ওয়াটার সার্ভিসে মোট ১০টি বাস। তার মধ্যে চট্টগ্রামে দুটি। কোনোটিই পুরোপুরি নষ্ট হয়নি। সার্ভে করানোর জন্য কিছু ডকইয়ার্ডে আছে। বাকিগুলো আস্তে আস্তে যাবে। ওসব বাস ঠিক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মূলত বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনার পর বাদামতলী থেকে গাবতলী রুটে ওয়াটার বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।