নেত্রকোণার ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কের আশারানী খালের ওপর বিকল্প বেইলি সেতুটি ভেঙে গেছে। শনিবার দুপুরে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ে সেতুটি ভেঙে খালের নিচে পড়ে যায়। এতে করে সেতুর দুই পাশে আটকা পড়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, ওই সড়কটি প্রশস্তকরণসহ সংস্কার এবং অন্তত ১১টি বেইলি সেতু ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণকাজ চলছে। কিন্তু সেতু নির্মাণকাজের সময়সীমা শেষ হলেও এখনো অর্ধেক কাজ বাকি।
নেত্রকোণা (সওজ) সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা থেকে কলমাকান্দা উপজেলা সদর পর্যন্ত অন্তত ২১ কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘ সাত বছর ধরে বেহাল অবস্থায়। সড়কটি সংস্কারে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল একনেকে ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা, ১১টি পিসি গার্ডার ও আরসি গার্ডার সেতুতে ৭০ কোটি টাকা এবং সড়ক সংস্কারে ১৩০ কোটি টাকা রয়েছে। দুটি প্যাকেজে সেতুগুলো ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর এবং দুটি প্যাকেজে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সড়ক সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুগুলোর কাজ পায় ‘এসিএল এমএইচসিএল ডন জেভি’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর সড়কের কাজ পায় ‘জন জেভি (জন্মভূমি ওয়াহেদুজ্জামান নির্মিতি)’ ও ‘রানা বিল্ডার্স’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে ‘জন জেভি’ ঠাকুরাকোনা থেকে গোমাই সেতুর এপ্রোচ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ৭২ কোটি টাকার কাজ পায়। সেতুগুলোর মেয়াদকাল ২০২০ সালের জানুয়ারি আর সড়কের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেহিসেবে সেতুর কাজের সময়কাল এক বছর তিন মাস আগে চলে যায়। অবশ্য কর্তৃপক্ষ জানায় সেতুর মেয়াদকাল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি সামান্যই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু ও সড়কের কাজ ঢিমেতালে করায় দুর্ভোগ কমছে না। এই সড়কের আশারানী খালের ওপর মূল বেইলি সেতু ভেঙে পাশে যে বিকল্প বেইলি সেতু করা তা শনিবার দুপুর দুইটার দিকে ভেঙে যায়। সড়ক নির্মাণে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক কলমাকান্দার উদ্দেশে যাওয়ার সময় বেইলির পাটাতনসহ ট্রাকটি খালে পড়ে যায়। এরপর থেকে সেতুর দুপাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ধরমপাশা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিদিন সহ¯্রাধিক পর্যটক কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের ঘুরতে আসে।
বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসিএল এমএইচসিএল ডন জেভি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নেত্রকোণা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাইদুল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে বিকল্প সেতুটি ভেঙে গেছে। তা মেরামত করতে দুই
থেকে তিন দিনের মতো লেগে যাবে। কারণ ট্রাঞ্জাম, ডেকিংসহ বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ করতে হবে। সেতুগুলোর মেয়াদ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে আশা করা যাচ্ছে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ ছাড়া আশারানীর স্থানে কোনো বিকল্প সেতু ধরা ছিল না। ঠিকাদারকে সওজের পক্ষ থেকে বলে তা করানো হয়েছে।