মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের গজারিয়া বাতেনিয়া আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন খালের উপর নির্মিত একটি সেতুকে গত প্রায় দেড় বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার দীর্ঘ দিন পার হলেও এই সেতুর উপর দিয়েই চলাচল করছে যানবাহন ফলে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরোজমিনে সেতুতে পরিদর্শন করে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের পুরনো সেতুটি রীতিমতো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অবস্থা এতটাই নাজুক যে সংস্কার করে এটি মেরামত করার অবস্থায় নেই। পিলারের নিচ থেকে সরে গেছে মাটি, রেলিংগুলো ভাঙ্গা, সেতুর বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত যার উপর দিয়ে লোহার পাত বসিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সেতুটির পূর্ব প্রান্তে ‘সাবধান! ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজথ লেখা সম্বলিত একটি নির্দেশিকা ঝুলিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে এলজিইডি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু হওয়া সত্ত্বেও এর উপর দিয়ে স্বাভাবিকের মত চলাচল করছে যানবাহন ও মানুষ। সম্প্রতি ষোলআনীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় এ পথে যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েক গুণ ফলে বেড়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
স্থানীয়রা জানায়, ইমামপুর ইউনিয়নের মোট সতেরোটি গ্রামের মধ্যে পাঁচটি গ্রামের সাথে উপজেলা পরিষদের সংযোগ ঘটানোর উদ্দেশ্যে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি গজারিয়া বাতেনিয়া আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করে এলজিইডি। প্রথমে শুধু মানুষজন চলাচল করলেও কালের বিবর্তনে সেতুটি দিয়ে বড় বড় যানবাহন চলাচল শুরু করে। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার এবং দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ২০১৯ সালের দিকে সেতুতে চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেই বছরের শেষের দিকে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এলজিইডি এবং বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে সেতুর পাশে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ব্যবহার করছে এলাকাবাসী।
সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী ট্রাকচালক মঞ্জুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ষোলআনী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে যাওয়ার একমাত্র পথ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এই সেতুর ওপর দিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ হোসেন জানান, প্রতিদিন এ সেতুটি ব্যবহার করতে হয় তাদের। তাদের গ্রাম থেকে অন্যত্র যেতে চাইলে এই সেতু ব্যবহার করতেই হবে তাদের। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে যদি একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া হতো তাহলে নিরাপদে তারা সেটি ব্যবহার করতে পারতেন। সেতুটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো দিন যানবাহনসহ করে ধসে পড়তে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে ইমামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে ওই স্থানে নতুন একটি সেতু দাবি নিয়ে এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। সেতুটি ধসে পড়ে যেকোন সময় জানমালের ক্ষতি হতে পারে সেজন্য গত দুই বছরে একাধিকবার এলজিইডি মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী, গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গজারিয়া উপজেলা প্রকৌশলীকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় সেতুটি নির্মাণের জন্য মুন্সীগঞ্জ ০৩ আসনের সংসদ সদস্য নিজেও ডিউ লেটার দিয়েছেন। গত বছর সেতুর মাটি পরীক্ষার( সয়েল টেস্ট) ফান্ড না থাকায় তিনি নিজস্ব অর্থায়নে মাটি পরীক্ষার কাজটি করে দেন। দীর্ঘদিনেও দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। দুর্ঘটনা রোধে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ওই স্থানে একটি বেইলী ব্রিজ বা বিকল্প রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এলজিইডির গজারিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ইশতিয়াক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আঁধারমানিক, ষোলআনী, দৌলতপুর,চর ঝাপটাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সেতুটি ব্যবহার করেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।