ভৈরবের আগানগরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জোড়া খুন ও ৩ শতাধিক বাড়িÑঘর ভাংচুর ও লোট-পাটের ঘটনায় পৃথক ২টি মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতঙ্কে ২ গ্রামের কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক পুরুষ । পাশাপাশি শিশু-কিশোরী,যুবতী,ও বৃদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে । এ ছাড়া বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ২ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ২ গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক। তবে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে ।ফের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসিদের।বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ।
ভৈরবের আগানগরের খলাপাড়ায় ও লুন্দিয়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে মকবুল মিয়া ও পাভেল মিয়া নামে ২ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহতের ঘটনায় আক্কাছ মিয়া ও শেখ উজ্জবল মিয়া পৃথক ২ টি মামলা দায়ের করেছে।সংঘর্ষে হত্যাকান্ডের পর পরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় এক পক্ষ । পরে নিহত মকবুল ও পাভেলের সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লোট-পাট চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লোট-পাট চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে । সংঘষের্র কারণে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকায় ২ গ্রামের সহস্রাধিক কৃষকের জোয়ানশাহী হাওরের প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ।
তবে এ ধরনের ঘটনায় ও তান্ডবলীলায় আশ-পাশের গ্রামের লোকজন জানায় । একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের খুন,ভাংচুর,লোট-পাট তারা জীবনে কখনো এমন তান্ডবলীলা দেখেননি । যা স্বাধীনতা যুদ্ধে হানাদারদেরকে ও হার মানিয়েছে । গেল শনিবার খলাপাড়া গ্রামে ধান চুড়ার সময় ধানের খড় (বন) সরানোকে কেন্দ্র করে খলাপাড়ার নিহত মকবুল ও আক্তারের মাঝে প্রথমে কথাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রুপ নেয় । এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ভিন্ন ভিন্ন বংশ উভয় পক্ষের সাথে যোগ দেয় । পরে সংঘর্ষ পুরো খলাপাড়া ও লুন্দিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে । এ সময় এক পক্ষের মকবুল ও পাভেল গুরুতর আহতসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয় । ভাংচুর করা হয় অন্তত ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও লোট-পাট করা হয় প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদ । পরে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মকবুল ও পাভেল মারা যায় ।
এ সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় । সংঘর্ষে মকবুল ও পাভেল নিহতের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মকবুল ও পাভেল সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ব্যাপক ভাংচুর ও লোট-পাট চালায় ।বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ও ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তারা মিয়া ও বিপাশা। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ।
এ বিষয়ে লুন্দিয়া গ্রামের ফরিদ সিকদার জানান, আমরা কোন সংঘর্ষে জড়ায়নি । তারপর ও পূর্ব শত্র“তার জের ধওে আমার বাড়ি-ঘরসহ প্রায় ৩শ বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও প্রায় কোটি টাকার লোট-পাট ও ক্ষয়-ক্ষতি করেছে শেখ বাড়ি,মেনা বাড়ি ও পাগলহাটির লোকজন ।
স্থানীয় এলাকাবাসী জামাল সিকদার জানান,খলাপাড়া গ্রামে ধান চুড়ার সময় ধানের খড় (বন) সরানোকে কেন্দ্র করে খলাপাড়ার নিহত মকবুল ও আক্তারের মাঝে প্রথমে কথাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রুপ নেয় । পরে মকবুল ও পাভেল সংঘর্ষে মারা যায় ।
একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় বাড়ি-ঘর ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন ।হাজি আঃ খালেক জানান,তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের খুন ,মার্ডার ও ভাংচুর জীবনে কখনো দেখিনি ।
নিহত পাভেলের পিতা আঃ খালেক জানান, তার ছেলে নির্দোষ সে বাড়ির সামনে দাড়িয়েছিল । পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে । সে পুত্র হত্যার বিচার দাবি করেন ।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান,২ গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় জমির পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে আশা করছি কোন সমস্যা হবেনা । আমরা ধান কাটা ও ঘরে তোলার জন্য প্রশাসনের সহায়তায় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করবো ।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি মোঃ শাহিন জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুন্দিয়া ও খলাপাড়ায় ২টি খুনের ঘটনায় অন্তত ২শত জনকে আসামি করে পৃথক ২টি এজাহার পেয়েছি । মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে । এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।