মঙ্গলবার বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফের ৫০তম শাহাদ বার্ষিকী পতাকা উত্তোলন, পুষ্পস্তবক অর্পন, মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর বর্তমান (রউফনগর) গ্রামের পারিবারিক উদ্যোগে সকাল ৭ টায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থগার চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ এর বড়বোন জোহরা বেগম, মুন্সী সাইদুর রহমান সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। দুপুর ১২টায় মধুখালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা মনোয়ার, মধুখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মুরাদুজ্জামান (মুরাদ), কামারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান বিশ্বাস (বাবু) সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ এর প্রকৃতিতে পুষ্পস্তবক আর্পন করেন। পরে কোরআন তেলওয়াত ও দোয়া মাহফিল শেষে মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত করেন কামারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুর রহমান বিশ্বাস (বাবু)। এ ছাড়া মাগরিব নামাজ বাদ বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের মসজিদে দোয়ার মাহফিল আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করবেন মসজিদের পেশ ইমাম মোঃ হাবিবুর রহমান পরে তোবারক বিতরন করে অনুষ্ঠান শেষ করা হবে।
বীরশ্রেষ্ঠের পিতা মুন্সী মেহেদী হাসান মাতা মকিদুননেছার একমাত্র পুত্র সন্তান মুন্সী আবদুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসের ১ তারিখে বর্তমান মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফ নগর (সালামাতপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১১ বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। এরপর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি তৎকালীন ইপিআর (বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) বর্তমান (বিজিবি)তে ১৯৬৩ সালের ৮ মে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ১৩১৮৭।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার উইংয়ে কর্মরত অবস্থায় ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং তিনি মেশিন গানার হিসেবে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের অধীনে রাঙ্গামাটির মহালছড়ি নৌপথ অঞ্চলে বুড়িঘাট নামক স্থানে চিংড়িখালের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ‘৭১ এর ২০ এপ্রিল পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে মুন্সী আবদুর রউফের মেশিন গানের গুলিতে পাকবাহিনীর ২টি লঞ্চ, একটি ¯প্রীডবোড ডুবে পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন সৈন্যের সলিল সমাধি ঘটে। এ সময় হঠাৎ প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত মটার সেলের আঘাতে তিনি শহীদ হন। ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ শহীদ হবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে বুড়িঘাট নিবাসী জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃঞ্চ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ এর কবরের স্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হন। ১৯৯৭ সালে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়।
বিগত ২০০৮ সালে ২৮ মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফ নগর রাখা হয়। ওই বছরেই তার নামে নিজ গ্রাম রউফ নগরে স্থানীয় সরকার সমবায় মন্ত্রনালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ন কৃতিত্তের জন্য সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করেন। এ ছাড়া তার নামে এলাকায় কামারখালী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজ যা প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি করেছেন। গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ গেট, ঢাকায় বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফ রাইফেলস স্কুল এ- কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।