আগামীতে সরকারি কোনো সেবা পেতে কিংবা দরপত্রে অংশগ্রহণে অবশ্যই টিআইএনের রিটার্ন জমার স্লিপ লাগবে। এখন শুধু টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ থাকলেই গাড়ি রেজিস্ট্রেশন নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ-নবায়ন এবং ঠিকাদারি কাজে অংশ নেওয়া যায়। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে রিটার্ন জমার স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) ছাড়া ওসব সরকারি সেবা পাওয়া বা দরপত্রে অংশ নেয়া যাবে না। কারণ সব ক্ষেত্রেই রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে। ওই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে- অর্থবিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, সড়ক পরিবহণ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মার্চ মাসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়কর রিটার্ন জমা ও উৎসে কর কর্তন কার্যক্রম বেগবান করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা হয়। ওই সভায় ১০ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সবাই রিটার্ন জমা বাড়াতে টিআইএন সনদের বদলে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করায় এনবিআরের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে কোনো পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা দেয়ার জন্য দরপত্র জমার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। একইভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন-নবায়ন, নৌযান রেজিস্ট্রেশন-নবায়ন, আমদানি-রফতানি সনদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি ও নবায়নে ই-টিআইএন সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু বাস্তবে টিআইএনধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনলাইন থেকে এই সনদ নিয়ে সব সুবিধা ভোগ করলেও আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। ফলে রিটার্ন জমার হার বাড়ছে না। বরং বড় একটি অংশই করের আওতার বাইরে থাকছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা সাড়ে ৬১ লাখেরও বেশি। কিন্তু মাত্র সাড়ে ২৫ লাখ করদাতা‘ রিটার্ন দাখিল করে। যা বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একেবারেই বেমানান। আয়কর আইনে সরকারি-বেসরকারি সেবায় টিআইএন বাধ্যতামূলক করা আছে। তাই সেবা পেতে অনেকে টিআইএন নেন, কিন্তু করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের আয়কর অফিসে লোকবল সংকট থাকায় নিয়মিত জরিপ চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের আইন, বিধি বা আদেশে টিআইএনে বদলে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র বাধ্যতামূলক করে তাহলে রিটার্ন জমা বাড়ার পাশাপাশি কর আদায়ও বাড়বে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে একজন গাড়ির মালিক রিটার্ন জমা না দিয়ে শুধুমাত্র ই-টিআইএনের মাধ্যমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে। আয়কর আইনে রিটার্ন জমা না দেয়ার কারণে টিআইএন প্রত্যাহার বা বাতিলের সুযোগ নেই। তাই টিআইএনধারীদের রিটার্ন জমা না দিয়ে আয় গোপন ও কর ফাঁকির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া দরপত্রে অংশগ্রহণ, ঠিকাদারি তালিকাভুক্তিসহ সব ক্ষেত্রেই রিটার্নের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র জমার বাধ্যবাধকতা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে কর জাল ও কর কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করজাল বাড়াতে এমন উদ্যোগ ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ আইনে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেয়ার কথা বলা থাকলেও অনেকে রিটার্ন জমা দেয় না। নতুন পদ্ধতি চালু করা গেলে রিটার্ন জমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। তবে এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে মানুষের হয়রানিও বেড়ে যেতে পারে। কারণ এখন প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পেতে যে ধরনের কষ্ট ও পয়সা খরচ করতে হয়, সেটি আরো বাড়বে। কারণ তখন সেবা পেতে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র লাগবেই। বাধ্য হয়েই মানুষ কষ্টও করবে, বেশি পয়সাও খরচ করতে হবে। তবে অটোমেশনের মাধ্যমে এ উদ্যোগের বেশি সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনলাইনে করদাতা রিটার্ন জমা দেবে আর অনলাইনেই যদি করদাতাকে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেয়া যায় তাহলে সেটি হবে যুগান্তকারী উদ্যোগ।