স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সরাইলের ‘কুচনি বধ্যভূমি’ দিবস পালন করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন। গতকাল ২০ এপ্রিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ওই স্থানে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। নিরবতা পালন করা হয়েছে এক মিনিট। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ওই গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের ৫ জন পুরূষ ও ৪ জন মহিলাকে বাড়ি থেকে ওঠিয়ে এনে এই স্থানটিতে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী। আর এখানেই তাদেরকে মাটি চাপা দিয়েছিলেন কয়েকজন গ্রামবাসী। প্রথমবারের মত সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লোত হয়ে পড়েন শহীদদের স্বজনরা। তাদের চোখের জলে সেখানে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল। বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালণায় বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ইসমত আলী, ডেপুটি কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজ আলী, প্রাণেশ দাস ও পাকবাহিনীর বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী শেখ মো. আফসার আলী। বক্তারা বলেন, দেশের জন্য রক্ত বিলিয়ে দেওয়া বীর শহীদদের এ বধ্যভূমির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি খুবই জরূরী। এরাই (শহীদরা) হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এই দেশে অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সরকারের সুবিধা ভোগ করছে। আর দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেও তারা হচ্ছেন বঞ্চিত। আজ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ভূলুন্ঠিত হওয়ার পথে। এই হত্যাকান্ডে মা বাবা হারানো সুধাংশো দাস (৭১), পিতা হারা ব্রজেন্দ্র দাস (৭২) ও দাদা দাদী হারা নিরঞ্জন চন্দ্র দাস (৭০) অনুভূতি ব্যক্ত গিয়ে করতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা বলেন, এ দেশের কতিপয় রাজাকারের সহায়তায় চোখের সামনে পিতা মাতা দাদা দাদীকে হত্যা করল। কিছুই করতে পারিনি। বাবার মুখে একটু পানি দিয়ে দৌঁড়ে পালাতে হয়েছে। লাশটি পর্যন্ত সৎকার করতে পারিনি। কঠিন বিভিষীকাময় কষ্ট ও স্মৃতি বুকে ধারণ করে বেঁচে আছি ৫০ বছর ধরে। পাহাড় সমান দু:খ নিয়েই জীবন কাটাতে হবে। আমাদের খবর কেউ নেয় না। আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধাও পায়নি। কত লোক এখানে আসে যায়। বধ্যভূমিরও কিছুই হল না। আমরা এ বধ্যভূমির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। এখানকার একটি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মরতে চাই। কুচনি বধ্যভূমিতে শহীদ ৯ জন হলেন- জগৎ মোহন দাস (৭০), কৈশল্য রানী দাস (৬৫), সচীনন্দন দাস (৬৫), প্রহলাদ দাস (৫৫), তারিনী দাস (৭১), বৈকন্ঠ দাস (৮০), মহেশ্বরী দাস (৭৫), বিধু রানী দাস (৫৫) ও মুক্তলতা দাস (৭০)।