প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের পল্লীতে ব্যাঙের ছাতার মতো মৌসুমী ভেজাল লাচ্ছা সেমাইয়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। সাধারন মানুষ যাতে প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য ফ্যাক্টরির সাইনবোর্ডে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখা হয়েছে। প্রায় অর্ধ-শতাধিক সেমাই ফ্যাক্টরি সৈয়দপুরের বিভিন্ন পল্লীতে গড়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার কামারপুকুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ধলাগাছ গ্রামের মতিরবাজার এলাকার কাবাজ ফকিরের জুম্মা সংলগ্ন এলাকায় একটি অবৈধ মৌসুমী লাচ্ছা সেমাই ফ্যাক্টরিতে সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র নজরে আসে।
সেমাই ফ্যাক্টরির চারদিকে টিন দিয়ে ঘেরা। সাধারন মানুষের প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেখানে দরজার সামনে সাইনবোর্ডে লাগিয়ে রেখেছে নূর ফুড প্রোডাক্ট, মালিকের নাম লেখা রয়েছে মো. মনিরুল ইসলাম মানিক, পরিচালক হিসেবে নাম লেখা রয়েছে মো. নুরুল ইসলাম। এই পরিচালক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সেই কথাও সাইনবোর্ডে লেখা আছে।
অনেক খোজাখুজি করেও মালিকের দেখা না পাওয়ায় কথা হয় পরিচালক মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দম্ভক্তি করে বলেন, আমার ফ্যাক্টরিতে কারো প্রবেশের অধিকার নেই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার বাড়ি ব্রাহ্মনবাড়ির কসবায়। সেই এলাকায় হেফাজত তান্ডব চালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, আমি সেই এলাকার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন যা খুশি তাই করবো। স্থানীয় ইউএনও, বিএসটিআই কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ আমার পকেটে। আমার ভেজাল লাচ্ছা সেমাই নিয়ে পত্রিকায় লিখে কোন লাভ হবে না। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অত্যন্ত নি¤œমানের ময়দা ও ট্যালু দিয়ে (এক ধরনের পশুর চর্বি) পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই সেখানে তৈরি হচ্ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ রাতের বেলা সেমাই তৈরির সময় এক ধরনের দুর্গন্ধ বের হয়। ফলে পথচারীদের পথ চলাচল অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে। অনেক পথচারি দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বমি করে দেয়। কিন্তু এলাকাবাসী ফ্যাক্টরি পরিচালকের দাপটে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে থানা পুলিশের ভয় দেখায়। আর বলে যে, আমি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার লোক। দেখোনাই হেফজতিদের তান্ডব। বেশি বললে সেই রকম তান্ডব এই এলাকাতেও করা হবে। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। পরিচালক নুরুল ইসলামের এমন কথা শুনে টু শব্দটি করতেও ভয় পাচ্ছে সাধারন মানুষ। তবে এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অত্যন্ত নি¤œমানের ময়দা ও চর্বি ব্যবহার করে রাতের আঁধারে সেখানে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। যে কেউ চাইলে ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে পারবে না। সবসময় দরজা বন্ধ থাকে।
তারা আরও জানায়, ওই সেমাই খেয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ব্যবহারে কোন নজরদারি করছে না। এ ধরনের কারখানা গোটা উপজেলায় প্রায় শতাধিক গড়ে উঠেছে। এসব লাচ্ছা সেমাইয়ের মৌসুমী কারখানা। ফ্যাক্টরি মালিকরা মালামাল তৈরি করে রমজান মাসের এক সপ্তাহ আগে সবকিছু বিক্রি করে দেয়। এজন্য এখনই উপযুক্ত সময় তদারকি করার।
জানতে চাইলে কামারপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলেমুল বাশার মুঠোফোনে বলেন, ভেজাল খাদ্য খেলে মানুষ অবশ্যই অসুস্থ হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারি পরিচালক বোরহান উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, এখন লকডাউনের সময় চলছে এ বিষয়টি আপনি স্থানীয় ইউএনওকে বলেন। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ মুঠোফোনে জানান, আমাকে ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।