বিশে^র জন্য নভেল করোনা ভাইরাস এক বিরাট ধাক্কা। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগেও যে একটি ভাইরাস এভাবে পৃথিবীর বুকে মহামারী ঘটাবে ত হয়তো অনুমেয় ছিল না। এই ধাক্কা যে কেবল এই কয়েকদিনেই শেষ হবে তা বলা যায় না। সবাইকে টিকার আওতায় আনতে আরও সময় লাগবে। তাছাড়া শতভাগ কার্যকরী একটি টিকা যা প্রয়োগে এই ভাইরাসে আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই না এমন একটি টিকা কতদিনে আসবে তাও এখনই বলা যাচ্ছে না। ততদিন কোনো কারণে করোনা ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় না নিলে প্রাণহানি বাড়তেই থাকবে। গত বছরের পর চলতি বছরেও ফের করোনা ভাইরাস আরও বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। প্রাণ বাঁচাতে লক ডাউন চলছে। কিন্তু কতদিন? নিজেরা স্বাস্থ্যসচেতন না হলে কেবল লকডাউন কোনো সমাধান নয়। তাছাড়া লকডাউনে সবচেয়ে দুর্ভোগে পরে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ। যারা একবেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রম না করলে পরিবারের সদস্যাদের মুখের আহার যোগাড় করা সম্ভব হয় না। এমন বাস্তবতায় তাদের ঘরে রাখতে হলে তাদের তিনবেলার খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেই সহযোগীতার দায়িত্ব সমাজের বিত্তবান মানুষের। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি দরিদ্র, অসহায় আর খেটে খাওয়া দিনমজুর যারা আজ উপাজর্নহীন জীবন যাপন করেছে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে অনেকে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদী। যার প্রধান শিকার হবে এসব দরিদ্র মানুষই। করোনায় বৈষম্য বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের। সামাজিক ব্যবধান বাড়ছে। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় এটি এসব দরিদ্র মানুষের সাথে আরও দরিদ্র মানুষ যোগ হবে। অর্থাৎ আর মানুষ দরিদ্র হবে।
সরকার এসব খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের জন্য আর্থিক বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। এরপর সমাজের মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা দেখেছি মহামারী থাকলেও প্রাণের তাগিতে নিজেদের থেমে থাকার উপায় নেই। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি,বেকারত্ব সামাল দিয়ে একইসাথে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এই কঠিন কাজটি করতে হচ্ছে। পৃথিবীতে একটি মহাসংকট চলছে। এই সংকটের নাম কোভিড-১৯ যা করোনা ভাইরাস নামেই সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে। একটি মহামারী যার প্রভাবে বিপর্যস্থ পৃথিবী। রাজনীতি, অর্থনীতি,শিক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই করোনা ভাইরাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। প্রাণ চাঞ্চল্য থেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত বছর থেকে শুরু হয়ে করোনা ভাইরাস লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যু এখন কেবল সংখ্যার হিসাব। প্রতিদিন বাড়ছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু। তারপর একে একে করোনা ভাইরাস এখন দুইশর বেশি দেশে ছড়িয়ে পরেছে। আমরা যদি মৃত্যুহার কমাতে চাই তাহলে ঘরের ভেতর নিজেকে বন্দী করা ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই। একদিন আমরা বাইরে এসে অবশ্যই আনন্দ করবো। কিন্তু মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই আনন্দ পাওয়া যায় না। তাছাড়া সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন দুঃসহ। তবে আনন্দ করার বহু উপায় রয়েছে। তার একটি হলো অন্যকে সাহায্য করা। এর থেকে নির্মল আনন্দ আর অন্য কিছুতেই নেই।
আমাদের আনন্দটা আমরা মানবিক করতে পারি। মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষকে সাহায্য করে দিনটি আমরা পার করতে পারি। আমরা একটি কাজ করতে পারি। আমাদের দেশে সামর্থ্যবান বহু মানুষ আছেন যাদের সহোযোগীতায় বাঁচতে পারে কয়েকটি প্রাণ। এ বছর সেই জায়গা থেকে অসহায় মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে খরচ করলেই এই শ্রমজীবি মানুষগুলো কষ্ট লাঘব হবে। সবাই একটু একটু করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তখন আর অনেক মানুষের জন্য সাহায্য করা কোনো কষ্টসাধ্য ব্যপার হবে না। তাতে হয়তো আমরা নতুন পোশাক পড়তে পারবো না কিন্তু মানুষগুলো তো ভালো থাকবে। নতুন পোশাক তো বছরের যে কোনো সময়েই পেতে পারি। কিন্তু দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা যদি দেশের এবং দেশের মানুষের উপকারে আসতে পারি তাহলে এর থেকে ভালো কিছু হয় না। আর দেশের কোটি কোটি মানুষ যখন খাবারের অভাব বোধ করছে সেখানে এই বিলাসিতাটুকু না করলেই ভালো হয়। সবার মাঝে নিজের সামর্থ্যটুকু দিয়ে সাহায্য করার মধ্যে য আনন্দ সেই আনন্দ অন্য কিছুতেই হতে পারে না। সেটুকুই না হয় এ বছর থাক। প্রতি বছরই আমরা কত বাহ্য-আড়ম্বরে কত টাকা খরচ করি। তার সবটা না দিলেও চলবে। কিছুটা অংশ কেবল আমরা সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেই। তাহলেই তা বড় অংশ হয়ে দরিদ্রের মাঝে ফিরে আসবে। এ বছর আমরা না হয় একটু মানবিক হই। মানবিকতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করি। তাহলে করোনার বিরুদ্ধে এক অন্য রকম লড়াই শুরু হবে যা সমাজের অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।