গত ৬ বছরেরও অধিক সময় ধরে সরাইল হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলাদের কোন সিজার (অপারেশন) হচ্ছে না। ফলে নষ্ট হওয়ার পথে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। কক্ষের ভেতর ধূঁলোবালির স্তুপ। ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ। কর্তৃপক্ষ বলছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসক সংকটের কারণে হচ্ছে না সিজার। অথচ হাসপাতালের আশপাশে ২-৩টি প্রাইভেট হাসপাতালে দেদারছে চলছে গর্ভবতী মহিলাদের সিজার। জনপ্রতি খরচ ১৯-২২ হাজার টাকা। অনেকে চলে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ বিহীন নাম সর্বস্ব ধাত্রীর কাছে। মাঝে মধ্যে ভুল অপারেশনে মা/ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগও ওঠছে। সম্প্রতি নাসিমা বেগম নামের প্রশিক্ষণ বিহীন ধাত্রী প্রসব করাতে গেলে নবজাতকের মৃত্যু হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হহয়েছে। এখানে সিজার বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মহিলারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভুগছেন জীবন ঝুঁকিতে। সরজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যা সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত গর্ভবতী মহিলাদের সিজারের ২টি কক্ষ। কক্ষের প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। দীর্ঘদিন ধরে সিজারের কাজ নেই। তাই সেখানে নেই মানুষের পদচারণা। বাহিরে ভেতরে বালুর স্তুপ। অপারেশন কক্ষের ভেতরে দূর্গন্ধ। নাক চেপে ধরেও রক্ষার উপায় নেই। মেঝেতে তেলাপোকা ও টিকটিকির পায়খানার স্তুপ। মেশিন ও যন্ত্রপাতি গুলোতেও পড়ে আছে ময়লা। পাশের সভা/ প্রশিক্ষণ কক্ষটিও এলোমেলো ভাবে ধূঁলায় একাকার। অব্যবহৃত থাকায় অযতেœ ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়ছে ৬-৭টি বেসিন। অত্যাধুনিক ৩-৪টি ওয়াশরূমের অবস্থাও খারাপ। চারিদিকে শুধু ধূঁলো ময়লার রাজত্ব। দরজা ভাঙ্গা। ধ্বংসের পথে হাই কমেট গুলো। হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স তাছলিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিজার বন্ধ থাকায় এখানে কেউ আসেন না। এজন্য এই অবস্থা। আমরা ২/৩ দিন পরপর ঝাড়- দেয়। মুছামুছিও করে থাকি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক থাকলে থাকেন না গাইনি চিকিৎসক। সিজার করতে হলে এ দুইজন চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে। একজন দিয়ে কোন ভাবেই সিজার সম্ভব নয়। গত ৭ বছর ধরে এই হাসপাতালে এমন দুইজন চিকিৎসক একসাথে আসছেন না। তাই অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকার ফলেও সিজার করা সম্ভব হচ্ছে না। গাইনি ও এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক এক সাথে সরাইল হাসপাতালে অবস্থান করেন না। কারণ একটি বিশাল সিন্ডিকেট এর পেছনে যাদুর কাঠি নাড়ছেন দীর্ঘদিন ধরে। দুই চিকিৎসককে একত্র হতে না দেওয়াই তাদের মূল উদ্যেশ্য। সরকারি হাসপাতালে সিজার না হলে বাধ্য হয়ে রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে। ব্যবসা হবে রমরমা। রোগী ম্যানেজের জন্য তাদের রয়েছে দালাল বাহিনী। এসব বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কোন পরিত্রাণ নেই। সরাইলে সদনপত্র বিহীন চিকিৎসকও প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন ৮-১০ বছর। সিভিল সার্জন অফিস সনদপত্র দেখানোর নির্দেশ দিয়ে লাপাত্তা হয়ে পড়েন ওই চিকিৎসক। এখনো তিনি নিজেকে আড়াল করে গোপনে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করছেন। অতি সম্প্রতি গাইনি চিকিৎসক মারিয়া পারভীন যোগদান করেছেন সরাইলে। তিনি সপ্তাহে ২/১ দিন আসেন। এখনো চেম্বারে বসে কোন রোগী না দেখার অভিযোগ করেছেন রোগীরা। কিন্তু এখন এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক নেই। রোগী রাবেয়া বেগম (৪৩) ও মর্জিনা বেগম (৪৫) বলেন, আমরা মেয়েলি সমস্যা নিয়ে আসি ডাক্তার পায় না। পুরূষ ডাক্তারের কাছে সব রোগ বলা যায় না। এখানে কত সুন্দর সুন্দর মেশিন আছে। ডাক্তার নাই। তাই নাকি গর্ভবতী মেয়েদের অপারেশন হয় না। সরকার দিলেও আমাদের ভাগ্যে সুবিধা নাই। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া বলেন, আমার দুই বছরে চিকিৎসক সংকটের কারণে এখানে গর্ভবতী মহিলাদের কোন সিজার হয়নি। কাজ না হওয়ায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সদ্য যোগদান কৃত গাইনি চিকিৎসক মারিয়া পারভীন এখনো অফিস চেম্বারে বসে রোগী না দেখার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তিনি (গাইনি চিকিৎসক) অসুস্থ্য। চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। তারপরও মাঝে মধ্যে হাসপাতালে আসেন।