ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাত্র ৫ শতক জায়গার বিরোধের জের ধরে চাচাত ভাই আনার মিয়ার (২৫) ছুরিকাঘাতে তারই চাচাত ভাই আবুল কাশেম মিয়া (৫০) খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সিদ্দিকুরের স্ত্রী সুগেরা বেগম (৪৫) ও কুতুব উদ্দিন (৫৫) কে আটক করেছেন। এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে কাশেমের প্রতিপক্ষের ৫-৬টি বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাটের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে কাশেমের চাচাত ভাই আক্তার মিয়ার নেতৃত্বে কিছু লোক। গতকাল বাদ যোহর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে কাশেমের লাশ দাফন করা হয়েছে। আর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পেশায় কৃষক আবুল কাশেম ওই গ্রামের আবদুল মন্নাফের ছেলে। পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
সরজমিনে গেলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, তেলিকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের সাথে প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমানের (৬৫) ৫ শতাংশ নিয়ে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। তারা দুইজন সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। জমির বিষয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামের পাশে বেড়িবাঁধে ও বাড়ির সামনের নীচু জমিতে মাটি কাটার টাকা পয়সার হিসাব নিকাশ নিয়ে কাশেমের সাথে মনোমালিন্য চলে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশের সড়কে জায়গার বিষয়ে কাশেম ও সিদ্দিকুর রহমানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দু’জনই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এর জের ধরে সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আনার মিয়া, মারাজ সহ ৫-৬ জন আবুল কাশেমের উপর হামলা চালিয়ে পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। কাশেম সক্সঘা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গ্রামের লোকজন এসে কাশেমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যেশ্যে রওনা দেন। গ্রাম থেকে কিছু দূর যাওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আবুল কাশেম। পরে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে যান গ্রামবাসী। কাশেম নিহতের পর সিদ্দিকুর রহমানসহ আনারের পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ওই গ্রামের জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, তাদের বাড়ির পাশের ৫ শতক জায়গা নিয়ে তাদের বিরোধ ছিল। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য গ্রামের লোকজন একাধিকবার সালিস বৈঠকও করেছেন। কিন্তু পক্ষই নিস্পত্তি মানেননি। শুধু একটু জায়গার জন্য আজকের এই খুন। গত শুক্রবার সকালে নিহত কাশেমের চাচাত ভাই চুন্টার বড়াইল গ্রামের বাসিন্ধা জালাল মিয়ার ছেলে আক্তার মিয়া কতিপয় লোক নিয়ে প্রতিপক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, বাচ্চু মিয়া, তৈয়ব আলী, সুরূত আলী, মাঞ্জু মিয়া ও রেনু মিয়ার বসতঘর ভাংচুর লুটপাট শেষে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা ধাউধাউ করে উপরে ওঠে যায়। একসময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে আগুনের শিখা যেতে থাকে। গ্রামবাসী সকলে মিলে আগুনকে কোন রকমে নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে ঘর গুলোতে রক্ষিত অনেক জিনিষপত্র পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।
কি হবে ৪ শিশুর?
কৃষক কাশেম ৪ ছেলে শিশুর জনক। মেয়ে নেই। বড় ছেলে শিশু আরাফাতের বয়স মাত্র ৮ বছর। ফরহাদের (০৬), জিহাদের (০৫) ও সাদের বয়স আড়াই বছর। পিতৃহীন এই ৪ শিশুর এখন কি হবে? তাদের আহার কে জোগাড় করবে? তাদের সংসারই বা চলবে কিভাবে? দুনিয়া বুঝার আগেই এতিম হয়ে গেল ৪টি শিশু। পিতার আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল চিরতরে। স্বামীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ৪ সন্তানকে আকড়ে ধরে কাঁদছেন কাশেমের স্ত্রী। সরাইল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) এএমএম নাজমুল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ওই গ্রামে যাই। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে সম্পন্ন করে গ্রামে পাঠিয়েছি। বাদ যোহর দাফন হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই গ্রামে পুলিশ অবস্থান করছেন। আজ (গতকাল) বাদ মাগরিব তারা মামলা দিতে আসবেন।