আর ক’দিন পরেই সোনা রঙে ভরে উঠবে বোরো ধানের খেত। শুরু হবে ধান কাটার উৎসব। গ্রামে গ্রামে ব্যস্ত হয়ে উঠবে কৃষাণ-কৃষাণি আর কৃষি শ্রমিকরা। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর খাগড়াছড়িতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা। তারা বলছেন এ মৌসুমের বোরো ধান যেন তাদের কাছে প্রকৃতির আশীর্বাদ।
তবে খড়া মৌসমে পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা, পোকার আক্রমণ ও ব্লাষ্ট রোগের কারণে খাগড়াছড়িতে এবার বোরো ধানের প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
কয়েকদিন আগে দু’দফায় বৃষ্টি হওয়াকে আশীর্বাদ উল্লেখ করে প্রত্যাশিত বোরোর ফলন পাবেন বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর খাগড়াছড়ি জেলায় ১১৩৮৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বোরো হাইব্রিড ৫৬৮৫ হেক্টর এবং উফশী বোরো ৫৭০২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বোরো হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৪.৭ মেট্ট্রিক টন এবং উফশী বোরো প্রতি হেক্টরে ৩.৮৩ মেট্টিক টন ধরা হয়েছে। কিন্তু পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ও ব্লাষ্ট রোগের কারণে অনেক ধানের থোড় চিটা হয়ে গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ পোকা-মাকড় ও নানা রোগে বোরো ধান আক্রান্ত হলেও কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ায় বোরো চাষে ব্যাঘাত ঘটেছে। তাছাড়া চলমান খরা ও সেচ সংকটের কারণেও প্রত্যাশিত ফলন না পাবার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, রামপ্রু মারমা ও মো. খোরশেদ আলম জানান, ধানে পোকা-মাকড়ের পাশাপাশি ব্লাষ্ট রোগের কারণে এবছর ভালো ধান হবেনা। তাছাড়া কৃষি বিভাগের লোকজন প্রয়োজনীয় পরামর্শ না দেওয়ায় আমরা নিজেদের মতো ওষধ দিয়েছি। অনেক সময় ওষধ কাজ না করায় ধান চিটা হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের কারণে সময় মতো সেচ দিতে না পারায় ধান জলে গেছে। এবছর প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া যাবেনা।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান কৃষকদের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুত না থাকায়, সময় মতো সেচ দিতে না পারায় এবং ব্লাষ্ট রোগের কারণে প্রত্যাশিত ফলনের চেয়ে ফলন কম হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নে মেজর পাড়া ও মংহলা পাড়া এলাকা এবং দুল্যাতলী ইউনিয়নের বানরকাটা দেওয়ান পাড়া এলাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: সোহরাব হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সঠিক সময় সঠিক পরামর্শ এবং কৃষকের নিবিঢ় পরিচর্যার ফলে এবার বোরো ধানের চাষ ভালো হয়েছে। আর কয়েক দিনের আবহাওয়া অনুকোলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মোঃ মূর্তজ আলী বলেন, চলতি বছর বোরো ধান ভালো হয়েছিলো। কিছুকিছু জায়গায় সেচ সংকটের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনে দু’দফায় বৃষ্টি হওয়ায় ফলন প্রত্যাশিত হবে বলে মনে করেন তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা সংকটের কারণে মুভমেন্ট কম হলেও তার কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের মাঠে যাচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে। সেচ সংকট দূর করা, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হলে আরো বেশি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাবে।