আব্দুর রশিদ পেশায় একজন আপাদমস্তক কৃষক। শখ কৃষিতে ক্ষেত্রে নতুন নতুন সবজি, ফল ও ফসলের চাষ করা। আর এ শখের অংশ হলো মাসে একদিন সময় করে দেশের যে কোন প্রান্তে নতুন কোন চাষের সংবাদ পেলে সেখান থেকে ঘুরে আসা। এভাবেই তিনি তার চাষে সফলতা দেখিয়ে চলেছেন। সাথে ভাগ্যের চাকা ঘুরয়েছেন নিজের পরিবারের। আবদুর রশিদ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের যুগিহুদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
বর্তমানে তার দুই বিঘা জমিতে গোল্ডেন কালারের নতুন জাতের তরমুজ তৃপ্তি চাষ করেছেন। রোজার ১০ দিন থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে। এই দুই বিঘা চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখান থেকে খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারবে বলে আশা করছেন। মাত্র দুই মাসে ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষ দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
তরমুজের পাশাপাশি তার পাঁচ বিঘা জমিতে রয়েছে মাল্টা, কমলা লেবু ও আঙ্গুরের চাষ। মহেশপুর উপজেলাই আঙ্গুর চাষ এবারই প্রথম শুরু করেছেন আবদুর রশিদ। ১০ কাঠা জমিতে ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের ৭৫ টি আঙ্গুরের গাছ রোপন করেছেন এই কৃষক। পাশর্^বর্তী দেশ ভারত ও ইউরোপের ইটালি থেকে এসব আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি আশানুরূপ ফল পান তাহলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ বছর এসব আঙ্গুর গাছ থেকে ফল পাবেন। তবে এখনো পর্যন্ত দেশে চাষ হওয়া আঙ্গুরের স্বাদ ভালো না হলেও সফল এ কৃষক আবদুর রশিদের দাবি তার আঙ্গুর স্বুস্বাদু হবে।
এর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্লাক বেরী (কালো রঙের) ও গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ রঙের) জাতের তরমুজ চাষ হতে দেখা গেছে। বর্তমানে সদর উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে এবং জেলায় এ সংখ্যা প্রায় ১৫ হেক্টর।
মহেশপুর উপজেলা শহরের পাশ ঘেষে বেয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদীর তীরে বেড়ে উঠা যুবক কৃষকআব্দুর রাশিদ ছাত্র জীবনে অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র হলেও লেখাপড়া করা হয়নি। কর্ম জীবনের শুরু থেকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও অন্যান্যের সহযোগীতায় কৃষি কাজ শুরু করেন। সব সময়ই তিনি তার চাষে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আরো পাঁচ বিঘা জমিতে রয়েছে আঙ্গুর ও লেবু। ইতোমধ্যেই ক্ষেতে থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। স্থানীয় ও ঢাকার ব্যাপারীরা ক্ষেতে এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।
তরমুজ চাষী আবদুর রশিদ জানান, বিভিন্ন সময় ইউটিবে কৃষি কাজ সংক্রান্ত অনেক ভিডিও দেখতাম। এ ছাড়া বিভিন্ন কৃষকদের মাধ্যমে খোঁজ রাখতাম কোথায় কোন চাষ হচ্ছে। নতুন কিছু মনে হলেই সেখানে ছুটে যেতাম। সেখান থেকে চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে নিজে চাষ করতাম। এভাবে চলছে আমার চাষকর্ম।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার দুই বিঘা জমির তৃপ্তি জাতের তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি। জমিতে যে তরমুজ আছে তা প্রায় দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। তাতে খরচ বাদে লাভ হবে দেড় লাখ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা অমিত বাগচী জানান, পানি নিষ্কাষণ ও বেলে দো-আঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশী উপযোগী যা ঝিনাইদহে বিদ্যমান। আর মান ভালো হওয়াই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ জেলার তরমুজের চাহিদা রয়েছে অনেক। তাই এই চাষ সম্প্রসারণে চাষীদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া তরমুজের পুষ্টিগুণও অনেক। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ এবং আইরন। পাশাপাশি পানির পরিমাণ বেশী থাকায় শরীরে পানির ঘাটতিও পুরণ করে। এ ছাড়া ফলটিতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্য প্রতিরোধে অনেক সহায়ক।