ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের তানিয়া পারভীন। শুধু তানিয়া পারভীনই নয়, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছে ফরিদপুরের অনেক নারীই। জৈব এই সার মাটিকে তাজা করে, নেই কোনো ক্ষতিকর দিক, দামেও সস্তা তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার।
ফরিদপুর পৌরসভার শোভাররামপুর মহল্লার বাসিন্দা তানিয়া পারভীন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৭সালে ৩টি রিং স্লাবের দিয়ে শুরু। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন রিং স্লাবে সিমাবদ্ধ নেই তানিয়া। বাড়ির উঠানে বিশাল টিনের সেড ও আরেক পাশে ছাপড়া বানিয়ে তৈরি করেছেন ২৪টি হাউজ বা চৌবাচ্চা। প্রতিটি হাউজ ৪ ফুট বাই ১০ ফুট আকারের।
¬¬¬প্রতিটি হাউজে ৪০মন গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১০কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরী হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই ভাবে প্রতি মাসে তানিয়ার ২৪টি হাউজ থেকে এক থেকে দেড় টন সার উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি সার খুচরা ১৫ টাকা ও পাইকারি ১২টা করে বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় হয় ২০ থেকে ২৫হাজার টাকা। এদিকে তানিয়ার উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাষিরা এসে তানিয়া পারভীনের বাড়ি থেকে সারা কিনে নিয়ে চাষাবাদ করছেন।
ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারকারী চাষি জুয়েল মল্লিক বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার জমির উর্বরতা বাড়ায়, ফলনও বেশী হয়। এ ছাড়া দামও কম। আর রাসায়নিক সারের দাম বেশী ও ক্ষতিকারক। এজন্য আমরা এখন জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট তানিয়া পারভীনের থেকে কিনে জমিতে ব্যবহার করছি। ফলে অল্প খরচে অধিক লাভবান হচ্ছি।
উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, সার বিক্রি করে আমি মাসে আয় করছি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সারের চাহিদা থাকায় দিন দিন বাড়িয়েছি উৎপাদন। আর আমার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই আমার কাছ থেকে সার উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করছেন। তারাও আগামীতে ভার্মি কম্পোস্ট সারা উৎপাদন করবেন। তবে সরকারী সহযোগিতা দরকার।
আর কৃষি বিভাগ বলছে এই সার উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে সবধরনের সহযোগিতা করছে তারা।
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবুল বাসার মিয়া বলেন, কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলার প্রায় ৩০০ কৃষক এই সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে রাসায়নিক সারের অতিব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।