সরাইলের পাকশিমুলে সিএনজি চালক দেলোয়ার হত্যা মামলার আসামিরা এখন গ্রামছাড়া। সুযোগে ইউপি সদস্য মোতালিবের নেতৃত্বে আসামি ও তাদের স্বজনদের বাড়ি ঘরে চলছে ভাংচুর লুটপাট। পুরূষ শুন্য পরিবারের নারীদের প্রতি মূহুর্ত কাটছে নিরাপত্তাহীনতায়। ইতোমধ্যে একজন নারী নির্যাতনের অভিযোগও ওঠেছে। প্রতিপক্ষের তান্ডবের ভয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এখন বাড়ি ছাড়া। মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে চলছে টাকা কামাই। জমির ধান কাটতে গুণতে হচ্ছে টাকা। তবে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন এসব মিথ্যা ও বানোয়াট। ঘটনার দিন উত্তেজিত লোকজন সামান্য ভাংচুর করেছিল। এরপর আর কিছু হয়নি।
সরজমিনে দেখা যায়, জনমানব শুন্য বসত ঘর গুলো অগণিত হত চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা জানালা ভাঙ্গা। বেড়ার টিন গুলো কোথাও কাটা। কোথাও ফুটো। কক্ষ গুলো একেবারে ফাঁকা। কোন মালামাল নেই। কাঁচের ভাঙ্গা টুকরোতে সয়লাব মেঝগুলো। অনেক কক্ষে কুকুর ঘুমোচ্ছে। চারিদিকে কিছু বৃদ্ধ মহিলা ঘুরছেন। কানাকানি করে কথা বলছেন। মলিন মুখে চারিদিকে তাকাচ্ছেন। হঠাৎ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতিতে তারা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু ভয়। প্রতিপক্ষের কেউ দেখে ফেলবে। ফলে রাতে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ালেন ৮০ উর্ধ্ব বয়সের এক মহিলা। পরে মারধরের ভয়ে নাম বলতে নারাজ তিনি। আবুনি বেগমের শরীর কাঁপছে। চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললেন, আরেকটা একাত্তর দেখছি। দেলোয়ার নিহত হওয়ার পরই রাতে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। সকল মালামাল লুটে নেয়। ছেলে বউরা বাচ্চা হাচ্চা নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচে। সকালে জেনেছি আরো বাড়িতে এমন হামলা হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই তারা দল বেঁধে আসে। খাবার ভেতরে যায় না। রাতে ঘুমোতে পারছি না। এখন দিনের বেলা অন্যের বাড়িতে থাকি। আরেক বৃদ্ধ মহিলা (৬০) বলেন, বাবারে কথা বলছি দেখলে বাড়িতে থাকতে পারব না। কার ধান কে কাটছেন। কানি প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। ডজনের ডজন গরূ নিয়ে যাচ্ছে। টাকা দিলে আবার ফেরৎ দিচ্ছে। অনেক মহিলা নিরবে কাঁদছেন। লজ্জায় মুখ খুলছে না। সব কথা খুলে বলতে পারব না। এই আলামত শেষ হবে কবে? আমরা কবে শান্তি পাব? হত্যা ও মামলার পরবর্তী সময়ে এমন তান্ডব বিরাজ করছে পাকশিমুল গ্রামে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নারী পুরূষ বলেন, আসামি হওয়া ও বাড়িঘর রক্ষার দোহাই দিয়ে ইউপি সদস্য মোতালিব, নদী দখল করে বালুর ব্যবসায়ি আকবর ও শাহেদ আলীর নেতৃত্বে চলছে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজী। আকবরকে অনেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে চিনেন। চাঁদার পরিমাণ সর্বনি¤œ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত। প্রকাশ করলে দেয়া হচ্ছে মারধরের হুমকি। কয়েকজন গৃহবধূকে পানিতে ফেলে স্বাস্থিও দেয়া হয়েছে। একাধিক নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। অনেক নিরীহ লোকজনকেও বাড়িতে আসতে টাকা গুণতে হচ্ছে। অনেকে টাকা দিয়েও আসতে পারছেন না। ছাদেক মিয়া নামের এক ব্যক্তি তার ভাগিনা রেজাউলের মাধ্যমে মোতালিব মেম্বারের কাছে ৬০ হাজার টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। এমন আরো অনেকেই রয়েছেন তারা ভয়ে মুখ খুলছেন না। জনৈক ব্যবসায়িকে গুণতে হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তিনিও চরম আতঙ্কে আছেন। ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোতালিব বলেন, চাঁদাবাজী ও ভাংচুরের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমাদের কোন লোক এ ঘটনার সাথে যুক্ত নয়। তারা নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে ভূয়া অভিযোগ করছেন। হত্যা মামলার বাদী নাজমা বেগম বলেন, আসামীর সংখ্যা আমি বলতে পারব না। আমি অসুস্থ্য। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সপ্তাহ দিন আগে এসব বিষয়ে আয়েশা বেগম বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এখনো নথিভূক্ত হয়নি। তদন্ত করছি।
প্রসঙ্গত: ইউপি সদস্য মোতালিব ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘনিষ্টজন। বছর দিন আগে বিরোধপূর্ণ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতক জায়গা ক্রয় করে ঝামেলার সৃষ্টি করেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যন সঠিক কথা বলায় বেঁকে বসেন মোতালিব মেম্বার। তিনি চলে যান আবুল কাশেমের দলে। আধিপত্য ও নির্বাচনকে ঘিরে সাইফুল ইসলাম ও কাশেমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ৭ মার্চ এক সংঘাতে মোতালিব মেম্বারের গোত্রে দেলোয়ার খুন হয়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান সাইফুলকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৮ জনের বিরূদ্ধে হত্যা মামলা হয়। রয়েছে গংও। চেয়ারম্যান এখন এলাকা ছাড়া।