নওগাঁর পত্নীতলায় দৈনিক ১শত টাকা মজুরীতে কাজ করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষি মজুররা। মৌসুমের এই সময় হাতে কোন কাজ না থাকায় পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়েই নামমাত্র মজুরীতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের অভাবের সুযোগ নিয়ে তাদের মুল্যবান শ্রম হাতিয়ে নিচ্ছেন এলাকার জোতদার শ্রেণীর সুবিধাভোগি মানুষ।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস। এরা সকলেই কৃষি নির্ভর। কৃষি মজুরের মাধ্যমে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কৃষি বহির্ভূত কাজে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে না। এ কারণে বছরের অর্ধেক সময় তাদের বেকার সময় কাটাতে হয়। আর এই বেকার সময়গুলিতে তাঁরা ধারদেনা করে, আগাম শ্রম বিক্রয় করে, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে জীবণ ধারণ করে। আশ্বিন-কার্তিক এবং বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মানুষদের কর্মহীনতা শুন্যে নেমে আসে। শনিবার পত্নীতলা-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফহিমপুর মাঠে শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও শিশুকে গাদাগাদি করে কাজ করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁরা খিরা হতে বীজ আলাদা করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় নমিতা ভুঁইয়া, আদরী ভুঁইয়া, সোহাগী কর্মকারসহ আরো কয়েকজন নারী জানান, ঘরে কোন খাবার নাই তাই বাধ্য হয়ে দৈনিক ১শত টাকা মজুরীতে আমরা কাজ করছি। কাজ না করলে সন্তান-সন্ততি নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতি বছর এই সময়ে তাদের খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় বলেও জানান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই নারী শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিয়ে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন বরেন্দ্রভূমি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফ জানান, কৃষি ও বনের উপর সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবণ-জীবিকা নির্ভরশীল। বছরের অর্ধেক সময়ই কাজ না থাকায় এই সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। মাঠে ধান কাটা শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের আর্থিক সংকট থাকবে। তাদের কর্মহীন সময়গুলোতে সরকারি ভাবে বিশেষ খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা দরকার বলে মনে করেন এই উন্নয়ন সংগঠক।