ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় করা মামলায় দুই ভাই রুবেল-বরকতসহ ৪৯ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
শনিবার জেলার এক নম্বর আমলি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শহিদুল ইসলাম। আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৪৯ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য শহর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির যোগ না দেওয়ার বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল মাত্র। অভিযোগপত্র ভুক্ত ৪৯ আসামির মধ্যে বরকত ও রুবেলসহ ২৫ জন গ্রেপ্তার আছেন। বাহিক ২৪ জন পলাতক আছেন। গ্রেপ্তার হওয়া বরকত ও রুবেলসহ ২১ আসামি আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযোগপত্র দাখিলের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শনিবার ফরিদপুর আদালতে (এক নম্বর আমলি) অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এরপর গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হবে। ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে শহরের গোয়ালচামট এলাকার মোল্লা বাড়িতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়ি যমুনা ভবনে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সুবল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এই মামলা পাল্টে দেয় ফরিদপুরে আওয়ামী রাজনৈতিক দৃশ্যপট। এর আগে মানি লন্ডারিং মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ওই দুই ভাইসহ এ ঘটনার সাথে জড়িত মোট পাঁচ জনের ৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকা জব্দ করার আদেশ দেন আদালত। আদালত ওই দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন ৫৫টি বাস, ট্রাক ও ব্যাক্তিগত গাড়ি ক্রোক করারও আদেশ দেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে (২৫ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তম বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে গত বছরের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪ (২) ধারায় এ মামলা করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত বছরের ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
গত বছরের ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ওই মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরস্থ আফসানা মঞ্জিলসহ শহরের বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে বরকত ও রুবেলসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তিতে এ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম সহ ২৫ ব্যাক্তিকে।