মণিরামপুর উপজেলার মশিয়াহাটী ডিগ্রী কলেজ মাঠ এখন শালুকে ভরা আর নৌকা বাঁধার ঘাটে পরিণত হয়েছে। ভরা বৈশাখেও কলেজ মাঠের পানিতে ফুটে আছে শালুক ফুল, আর কলেজের বারান্দার সাথে বাঁধা আছে মাছ ধরা মাঝদের নৌকা। শনিবার কলেজ চত্বরে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
জানাযায়, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী মশিয়াহাটী ডিগ্রী কলেজটি ভবদহের করাল গ্রাসে বিপযর্স্ত এখন। শুধু এই কলেজ নয় ? মণিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিমজ্জিত ছিলো কিছুদিন পূর্বেও। আর এলাকার সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের কথা-তো বলা বাহুল্য। বছরের পর বছর এ দূর্ভোগের কোন শেষ নেই এ অঞ্চলে অধিবাসীদের। সমস্ত দূর্ভোগের কারণ হচ্ছে একটাই ‘ভবদহ স্লইচ গেট’।
যশোরের মরণফাঁদ খ্যাত ভবদহ স্লুইচ গেটের সৃষ্টি ১৯৬১ সালে। বছর বিশেক এর সুফল পাওয়া গেলেও আশির দশকে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, সদর (আংশিক), অভয়নগর উপজেলা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ এলাকার কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে বিপর্যস্ত হতে থাকে। ১৯৮৮ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ওই এলাকার ২৭ বিলের পানি শ্রী-হরি নদী দিয়ে অপসারিত হয় ভবদহ স্লুইচ গেটের মাধ্যমে। এরপর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু দূর্ভোগের শেষ হয়নি এ অঞ্চলের মানুষের।
সর্বশেষ বিএডিসি’র ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচের প্রকল্প চলছে। যেটাকে এলাকার ভূক্তভোগী জনসাধারণ জনগণ বলছেন এটা একটা প্রহসন মূলক কাজ। তাদের মতে, ২৭ বিলের হাজার হাজার কিউসেক পানি মাত্র ১৩টি সেচযন্ত্র দিয়ে কীভাবে নিষ্কাশন করা সম্ভব ? কখনো নদীতে সেচ দেয়ার মতো পানি না থাকা, কখনো বিদ্যুত বন্ধ, আবার কখনো তিন মাস শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের কারণে কর্মবিরতি পালনের কারণে যেগুলি বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে।
এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বৈশাখেও যদি খাল-বিলে এত পানি থাকে, তবে আষাঢ়-শ্রাবণে এবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হতে হবে। এবার তো ফসল হলোই না, আগামী বছরও কি হবে তা জানেননা তারা। ফলে এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করেছেন। একদিকে করোনার কারণে আর্থিক দূর্দশা, অন্যদিকে একমাত্র ফসল না হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষেরা চরম দৈন্যতায় দিন কাটাচ্ছেন।