লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে আলাউদ্দিননগর মমিনপুর এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উদ্ধারকৃত সেই তরুনীর পরিচয় মিলেছে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লালমনিরহাট পুলিশ সেই তরুনী হত্যার ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পুলিশ হত্যার মোটিভসহ পুরো কাহিনি উদ্ধারসহ প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাক চালক চাচা ও আপন ভাতিজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রেম ঘটিত কারণে পূর্ব পরিকল্পনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে সুকৌশলে ডেকে এনে অষ্টাদশী সেই তরুনীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যার মোটিভসহ পুরো কাহিনি উদ্ধারসহ প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাক চালক চাচা ও আপন ভাতিজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বর্তমানে চাচা লালমনিরহাট জেল হাজতে আছেন এবং ভাতিজাকে পাঠানো হয়েছে যশোহর শিশুশোধনাগারে। হত্যার কাজে ব্যবহারকৃত ট্রাকটিও জব্দ করে ত্রিশাল থেকে লালমনিরহাটে আনার কথা জানান পুলিশ। সোমবার লালমনিরহাটের বি -সার্কেল এএসপি'র কার্যালয়ে হাতীবান্ধায় নয়তো পাটগ্রাম থানায় সাংবাদিকদের নিয়ে “মিট দ্যা প্রেস" একটি বিবৃতিমূলক সাক্ষাতকার আয়োজন করতে পারেন এমন আভাস পাওয়া গেছে জেলা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ময়মিনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার জনৈক ট্রাক চালকের প্রেমে পড়েন একই এলাকার অষ্টাদশী এক তরুনী। নিজ এলাকায় সেই তরুণীর নাম হামিদা আক্তার। নাম বদলে কলগার্ল হিসেবে তার আরো আলাদা আলাদা পরিচিতি আছে। কোথাও সুরমা আবার কোথাও নন্দিনী নামে পরিচিত।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাক চালক হয়ে যান দিশেহারা।আগের দুই স্ত্রী ও একাধিক সন্তান থাকায় নারী লোভী ট্রাক চালক সুন্দরী হামিদাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তবুও তরুনীর চাপ বিয়ে তাকে করতেই হবে। বিয়ের চাপ সামলাতে না পেরে প্রেমিকা হামিদাকে অন্য কোথাও নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন চরিত্রহীন প্রেমিক সেই ট্রাক চালক।
গত বছর পহেলা ডিসেম্বর ত্রিশাল থেকে রংপুরে আসতে বলা হয় সেই অষ্টাদশী তরুনীকে। ট্রাক চালক ও তার ভাতিজা (১৫) ট্রাক ভাড়ার উসিলায় আগেরদিন আসেন রংপুরে। তার আগে কুটকৌশল অনুযায়ী ১৫ দিন আগে থেকে তরুনীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন প্রেমিক ট্রাক চালক। অন্য একজনের ফোন দিয়ে তরুনীর সাথে যোগাযোগ চলত নিয়মিত।
পর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে রংপুরে আসতে বলা হয় তরুনীকে। ওইদিন বিকেলে রংপুরের দেয়া ঠিকানায় চলে আসেন সেই তরুনী।এরপর খাওয়া দাওয়া করে ট্রাকে উঠে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ট্রাক চালক, ট্রাক চালকের ভাতিজা ও অষ্টাদশী তরুনী হামিদা। পথিমধ্যে বড়খাতা বাউরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরির পর চাচা-ভাতিজা কোন একসময় দুজনেই তরুনীকে
গণধর্ষণ করেন। তরুনীকে ফাঁদে ফেলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হবে তা বিশ্বাস ছিল না তরুনীর। তর্কবিতর্ক বাক-বিতন্ডা করার একপর্যায়ে ট্রাকে থাকা রড দিয়ে তরুনীর মাথায় সজোরে আঘাত করেন ট্রাক চালক। ট্রাকের উপরে তরুনীর মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যান ধর্ষক ও হত্যাকারী আপন চাচা-ভাতিজা।
পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর আলাউদ্দিননগর নির্জন এলাকায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক তরুণীর লাশ দেখে গত ২ ডিসেম্বর'২০২০ইং সকালে পুলিশকে খবর দেন জনগণ। উদ্ধারকৃত রক্তাক্ত বিবস্ত্র লাশের পোস্ট মর্টেম শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। সেই দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ। ২ ডিসেম্বর দায়েরকৃত সেই ক্লু লেস মামলার মোটিভ উদ্ধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পর প্রথমে বাউরা জমগ্রাম থেকে একজন লোক জানান, এক মেয়ে ও দুজন পুরুষ লোককে বাউরা বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে এমন ক্লু পায় পুলিশ। এরপর আদিতমারী থেকে আরও একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনদিন আগে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম থানা পুলিশ বিশেষ টীম বিবস্ত্র সেই তরুনীর করুন মৃত্যুর কাহিনি উদ্ধার করতে সক্ষম হোন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা একান্ত কথোপকথনে জানান। তিনি আরও বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময় তরুনীর গায়ে জামা, কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বিবস্ত্র ও পায়ের নীচে পায়জামা ওড়না পড়ে থাকতে দেখা যায়।
মাথায় আঘাতের কারণে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে মুখম-ল রক্ত দিয়ে ভরে যায়।
এছাড়া তরুনীর শরীরে অন্য কোথাও আঘাত ছিল না। তবে ধর্ষণের আলামত হিসেবে তরুনীর পার্সোনাল পার্টসে দুইজনের সিমেন্ট পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানা ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন,এ বিষয়ে পুরো কাহিনি সাংবাদিকদের জানানো হবে। অপেক্ষায় থাকেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তাগণ খুব দ্রুত জানাতে আপনাদের ডাকবেন বলেও জানান তিনি।