ভৈরবে জোড়া খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরুষ শূণ্য অবস্থায় ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি হয়। দুটি হত্যাকান্ডসহ হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে উভয়পক্ষের দায়ের করা পর পর ৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭শতাধীক। ফলে গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন অনেকেই। এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে প্রশাসনসহ স্থানীয় কৃষি বিভাগ। অবশেষে পুলিশের পাহারায় জোয়ানশাহী হাওড়ে ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সংঘাত পুর্ন আগানগর লুন্দিয়া খলাপাড়ার কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে তাদের ঘরে তুলছেন।
গত ১৭ এপ্রিল ভৈরবের আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া খলাপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু দলের লোকদের মাঝে সংঘর্ষে ২ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট হয়। এ ঘটনায় ভৈরব থানায় উভয় পক্ষের ৫টি মামলা দায়ের হয়। ঐ সকল মামলায় প্রায় ৭ শতাধীক লোককে আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে লুন্দিয়া ও খলাপাড়া গ্রাম দুটি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে। এদিকে ঐ এলাকার জোয়ানশাহী হাওড়ে ৫হাজার হেক্টর বোরো ধান পাকতে শুরু করে^। ২হাজার পাকাধান ঘরে তোলা শংশয় শিরনামে সংবাদ প্রচার হলে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে প্রশাসনসহ স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
একদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক অপরদিকে হামলার আশংকায় হাওড়ের ২হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ধান কাটার বিষয়টি বিবেচনায় এনে ভৈরব থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জোয়ানশাহী হাওরে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের ধান কাটতে উদ্ভোবদ্ধ করেন। পুলিশের এমন আশ্বাসে মামলার আসামি ব্যাতীত লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে নির্বিঘেœ তাদের জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলেন।
এলাকার লোকজন বলেন, পুলিশ এসে তাদেরকে নির্ভয়ে ধান কাটতে বলেন। পরে সবাই যার যার জমির ধান কেটে ঘরে তুলার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তারা আতঙ্ক কাটিয়ে পুলিশের পাহাড়ায় ধান কাটতে পারছে বলে খুশি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
এ সময় প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশের একটি দল দুটি টিমে বিভক্ত হয়ে লুন্দিয়া ও খলাপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিরাপদে ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতা করেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষিকর্মকর্তাসহ ব্লক সুপারভাইজাররাও হাওড়ে উপস্থিত থেকে কৃষকদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, ঘটনার খবর পেয়ে কৃষি বিভাগ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে কৃষকদের ধান কাটার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও এখনো ধানা কাটা পুরোপুরি শুরু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কৃষকদের ধান ঘরে তোলার ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাবে বলেও জানান তিনি।
ভৈরব থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ শাহিন জানান, ৫টি মামলার বেড়াজালে পড়ে গ্রেফতার এড়াতে গ্রামবাসীর বাড়ি থেকে পলায়নের ধান কাটা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি দিয়েছিল এবেপারে মাননীয় পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সরাসারি পুলিশি পাহাড়ায় ইতোমধ্যে কৃষকদের ধান ঘরে তোলার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি। ধানকাটার উৎসব শুরু হয়ে গেছে, আশা করছি আগামী ৫/৭দিনের মধ্যে সবাই যার যার জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন। কৃষি বিভাগের অনুরোধে পুলিশের উপস্থিতিতে কৃষকরা নির্বিগ্নে নিরাপদে ধান কেটেছে। যতদিন জমিতে পাকা ধান থাকবে ততদিন পুলিশ উপস্থিত থেকে কৃষকদের ধান কাটতে পুলিশি সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।