ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জেল থেকে এসে রাতের অন্ধকারে বাদী পক্ষের জমির আধা কাঁচা ধান কেটে নিল হত্যা মামলার আসামীরা। গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার কাটানিসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার দুপুরে ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আলী রহমান (৩০) ও মজিবুর রহমান (৫২) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন। সংঘাত এড়াতে ওই গ্রামে পুলিশি টহল চলছে। সংঘর্ষ এড়াতে সেখানে দ্রƒত হাজির হন কর্মকর্তা ইনচার্জ এএমএম নাজমুল আহমেদ। হত্যা মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানার ৭০ জন আসামি প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করছেন বাদী পক্ষের লোকজন। গত ৯ মাসে ৯০ জন আসামীর মধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন মাত্র রাশেদ (২৭) নামের একজনকে।
পুলিশ, অভিযোগপত্র ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শত্রƒতা, নির্বাচন ও জায়গা জমিকে কেন্দ্র করে কাটানিসার গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য মিজান মিয়ার সাথে অলি মিয়ার বিরোধ দীর্ঘদিনের। এতে করে ওই গ্রামে দুটি বলয় গড়ে ওঠেছে। উভয় পক্ষ প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষে আহত হয়ে নিহত হয়েছেন আনোয়ারা বেগম (৭০) নামের এক মহিলা। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে জায়েদা বেগম (২৮) বাদী হয়ে বকুল মিয়াকে প্রধান আসামি করে ৯০ জনের বিরূদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয় প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকান্ডের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গিয়াছে। ওইদিনই সকল আসামীর বিরূদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন। বাদীনি জায়েদা বেগম সহ অনেকের অভিযোগ হত্যা মামলার ওয়ারেন্টের আসামিরা দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছেমত নিজেদের কাজকর্ম করছে। লিটন নামের এক আসামি নিয়মিত কাটানিসার বাজারে বসে পিয়াজো সিঙ্গারা বিক্রি করছে। পুলিশকে বলেও আসামীদের গ্রেপ্তার করাতে পারিনি। ফলে আসামিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠতে থাকে। গ্রামের একাধিক ব্যক্তি ও ইউপি সদস্য মিজান মিয়া বলেন, আসামি ৯০ জন। ৯ মাসে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন মাত্র ১ জনকে। ১৯ জন সেরেন্ডার করেছেন। ১৮ জন জামিনে এসেছেন। আর ২ জন বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। অতিসম্প্রতি বকুল মিয়া (৪৮) ও ২৩ নম্বর আসামি মুজিবুর রহমান জামিনে এসেছেন। জামিনে এসেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। মুজিবুর ও বকুলের নেতৃত্বে একদল আসামি নিহত আনোয়ারো বেগমের দেবর বজলুর রহমানের ৫ কোনি জমির আধাকাঁচা ইরি ধান গত শুক্রবার গভীর রাতে কেটে নিয়ে গেছে। দরিদ্র অসহায় কৃষক বজলুর রহমান ও তার ছেলে মাসুক মিয়া জমির ধান হারিয়ে এখন পাগলের মত ঘুরছেন। তারা বলছেন, এ জমির ধানেই আমাদের পরিবারের আহারের ব্যবস্থা হত। এখন আমাদের উপোস থাকতে হবে। কিন্তু বকুল মিয়ার পরিবারের লোকজন বলছেন, এই জমি বজলু বা মাসুকের নয়। এটা বকুল মিয়াদের। গ্রামের এক পুকুরের পাহাড়াদার আল-আমীন (২৭) জানায়, জমিটি মাসুক বন্ধক রেখেছেন অনেক দিন আগে। তারাই জমিটি দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করছেন। আজকে একজন ব্যক্তি ২টা করে বল্লম নিয়ে ঘুরছিল। পুলিশ আসায় দৌঁড়ে তেরকান্দা গ্রামে চলে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, আসামি পক্ষের কিছু নেতা যে করেই হউক এখানে আরেকটি হত্যা কান্ড ঘটানোর চেষ্টায় আছে। তাদের মূল উদ্যেশ্যে প্রতিপক্ষকেও জেলে পাঠাতে হবে। কাটানিসার গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে আরো কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এস আই আবু ইউসুফ বলেন, আসামি গ্রেপ্তার না করার অভিযোগ সঠিক নয়। আসামিরা এতদিন ছিল ব্রিকমিলে। প্রায়ই অভিযান করেছি। এখনো করছি। উচ্চ আদালত থেকেও অনেকে জামিনে এসেছেন। নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাজল চৌধুরী বলেন, জমির ধান কাটা হয়েছে এটা সত্য। তাদের সংঘাত সংঘর্ষের কারণে গত বছর গ্রামের লোকজন দুটি ঈদ-ই করতে পারেনি। পরিবারের মহিলা ও শিশুরা অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেছেন। এরপরও কিভাবে তাদের হাতে লাঠি ওঠে আমার বুঝে আসে না।