প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. আফিল গাজী (৬৫) জীবন চলে ভ্যানের প্যাডেল ঘুঁরিয়ে। পিতার সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে কোনো উপয়ান্ত না পেয়ে বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে তার জীবন সংগ্রাম।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় গদাইপুর ইউনিয়ন তকিয়া গ্রাম ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. আফিল উদ্দীন গাজী। দীর্ঘদিন ওই ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি খেঁজুর ও তাল গাছ থেকে রস আহরণ করতেন। এলাকায় গাছি হিসাবে তিনি সুপরিচিত। ২০২০সালে খেঁজুর গাছ থেকে পড়ে যেয়ে গুরুত্বর আহত হন। প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফেরেন। কিন্তু আগের মত কৃষি কাজ ও রস আহরণ করার মত ক্ষমতা নাই। সংসার চালানোর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে ভ্যান চালানো শুরু করেন। সে থেকেই এখন পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আফিল গাজীর পিতা মৃত সামছুর গাজী ২য় বিয়ে করার পর ১ম স্ত্রী আফিলের মাকে তালাক দিয়ে দেন। তাছাড়া পিতার সাড়ে ৪ বিঘা সম্পত্তি ২য় স্ত্রীর নামে লিখে দিলে আফিল শর্তহীন হন। এরপর পিতার মারা যাওয়ার পর আফিলের সৎ ভাইয়েরা তাদের সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত করলে ১৯৮৮ সালে সে শ্বশুর বাড়ী গদাইপুরে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রীর ৬ শতক জমিতে আফিল পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। এক ছেলে বিয়ে দিয়েছে আর এক ছেলে অন্যের বাড়ীতে থেকে কৃষি কাজ করেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছোট মেয়ে ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আফিল উদ্দীন গাজী জানান, স্বাধীনতার পর থেকে তকিয়া ওয়ার্ডের সদস্য এবং ১৯৮৬ সালে থেকে অদ্যাবধি ওয়ার্ডর সভাপতি দায়িত্ব পালন করছি। ২০০১ সালে বিএনপি শাসন আমলে ৩ মাস জেল খেটেছেন। তাছাড়া তার ওয়ার্ডটি জামায়ত-বিএনপি অধ্যাষিত। আওয়ামী লীগ দল করায় তাকে বিভিন্ন সময় এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। সে যেতে রাজী না হওয়ায় তাকে দুইবার মারপিট করা হয়। তারপরও তিনি আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকেছেন। ২০২০ সালে খেঁজুর গাছ থেকে পড়ে যাওয়ায় তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হন। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি মটর চালিত ভ্যান চালানো শুরু করেন। নিজের কোনো ভ্যান না থাকায় ভাড়া নিয়ে চালান। প্রতিদিন একশ টাকা মালিককে দিতে হয়। মালিককে ভাড়া টাকা দিয়ে সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে সাবেক এমপি অ্যাড. সোহরাব আলীর সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহার একটি পাঁকা ঘর পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও গদাইপুর পুলিশিং ফোরম এর সভাপতি এস এম সৈয়দ আলী জানান, দলীয় কোনো সুযোগ সুবিধা আসলে আফিলকে দেওয়া হয় এবং তার জন্য একটি পাঁকা ঘরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। গদাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুর নির্ম্মল চন্দ্র অধিকারী জানান, আফিল গাজী তকিয়া ৯নং ওয়ার্ডের সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি খেঁজুর গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার পর তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। তার সু-চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দলীয় যে কোনো অনুদান বা সুযোগ সুবিধা আসলে আফিলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হয় এবং তার বসবাসের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত একটি ঘরের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। দলের দূর্দিনের নিবেদিত এই আওয়ামী লীগ নেতা এ বয়সে এসে যাতে নিজস্ব একটি ভ্যান গাড়ী ও স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে পারে তার জন্য দলীয় নেতাদের সহানুভূতি কামনা করেছেন আফিল গাজী।