জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌরএলাকার সরদারপাড়া হতে ঘুগইল পর্যন্ত ১.৭৫ কিঃমিঃ সড়কে নিম্নমানের ইট ও মাটিযুক্ত বালু ব্যবহার করে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর যোগসাজোশে রাস্তা কার্পেটিং কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঠিকাদার বলছে, সব ঠিকঠিক হচ্ছে। আবার প্রকৌশলীর দাবি কাজ দেখভাল করছি।
ক্ষেতলাল প্রকৌশলী অফিস সুত্রে জানা গেছে, এলজিইডি বরাদ্দের আওতায় ১কোটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে উপজেলার সরদার পাড়া হতে ঘুগইল পর্যন্ত ১৭৫০ মিটার (১.৭৫ কিঃমিঃ) সড়কে ৩ ইঞ্চি ডইগ পুণঃকার্পেটিং কাজের দায়িত্ব পায় বগুড়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআর ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী মাহমুদুন নবী।
শনিবার ( ১লা মে) সরেজমিনে সরদারপাড়া থেকে প্রায় ১.৭৫ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে পুকুর থেকে তোলা মাটিযুক্ত বালু দিয়েছে তার উপর নিম্নমানের পুরানো ইটের খোয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের ইটের ভাঙা অংশ (রাবিশ) দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পুরনো সড়কের পিচ না উঠিয়ে তার উপরই নতুন কাজ করছে। এতে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছে রাস্তার কাজে স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাউকে এসে তদারকি করতে দেখা যায়নি। এমনকি ইটে পা দিয়ে চাপ দিলে তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এবিষয় নিয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে ঠিকাদারকে ফোন দিয়ে ওই রাস্তার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায় এবং ফেনালাপ শেষে যুগান্তর প্রতিনিধিকে দু’তিনদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এখন পর্যন্ত ওই রাস্তায় কাজ শুরু হয়নি। মুল ঠিকাদারের মোবাইল নাম্বার চাইলে সে কৌশলে ওই কাজের উপ-সহকারীর মোবাইল নম্বর দেয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন তালবাহানা দিয়ে যে নাম্বার দেয় তাও আবার মুল ঠিকাদারের বোন জামায়ের নাম্বার।
পথচারী, ঘুগইল গ্রামের আঃ মতিন ও হারুনূর রশিদ জানান, দুই মাস আগে এ সড়কের পূর্বের কার্পেটিং তুলে নতুন কার্পেটিং করার জন্য নামমাত্র খনন করে কিছু দিন ফেলে রাখে। কয়েকদিন পরে নিম্নমানের ইটের-সুরকি, এলাকার পুকুর থেকে তোলা মাটিযুক্ত বালু দেওয়ার পর রোলার দিয়ে ঠিকমতো রোলিং না করে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে চলে যায় ঠিকাদারের লোকজন। ওই রাস্তায় পানি না দেওয়ার কারণে যানবাহন ও লোকজন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তিতে পরেছে এলাকাবাসী, মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছে। চৈত্রের খরাই যাবাহন চলাচলের সময় এমন ধুলা বালি উড়ছে যে ওই রাস্তা দিয়ে লোকজন চলাচল’ত দুরের কথা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুস্কর হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে এ সড়কের রিপিয়ারিং কাজ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষেতলার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ছালমা বেগম বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন পর পুনঃসংস্কার হচ্ছে। তবে কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ঠিকাদার ইচ্ছামত নিম্নমানের ইট, বালু ব্যবহার করছে। রাস্তায় পানি ও রোলার পর্যন্ত দিচ্ছে না। যানবাহন চলাচলের সময় ধুলায় অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন অনেক ছেলে-মেয়েস্কুল-কলেজে যায়। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ আশা করছি।
অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআর ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী মাহমুদুন নবী এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তার বোন জামাই পরিচয় দিয়ে ফোন ধরে বলেন, আমি তার সবকিছু দেখাশুনা করি। সে নতুন মানুষ এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবে না আপনারা যা লেখার লিখুন।
ক্ষেতলাল এলজিইডির প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বলেন, আমি সব সময় কাজ ভালো করার চেষ্টা করি। খারাপ কাজ করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। এ সড়কে অনিয়ম হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। সড়কে কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ এলাকাবাসী আমাকে জানাই নি।