মাত্র ৩২টি আটক হওয়া ভারতীয় গরু এক মাস ১৯ দিন লালন-পালনে ব্যয় দেখিয়েছে ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। এতে প্রতি গরু লালন-পালনে প্রতিদিন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ শত ৪৩ টাকা।
সরকারী টাকা আত্মসাৎ করতেই এমন বিল ভাউচার তৈরী করে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ অনিয়মের সাথে একটি সিন্ডিকেট জড়িত এমন অভিযোগ উঠেছে।
আটক ভারতীয় একটি গরু লালন-পালনে প্রতিদিন ৪ শত ৪৩ টাকা ব্যয়, এমনই এক আজব বিল গরু নিলামের আগে ভাউচার পেশ করার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নানা প্রশ্নও তুলেছেন গরু খামারীরা।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারী টাকা আত্মসাৎ করতেই এমন বিল ভাউচার তৈরী করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই গরু গুলো নিলামে বিক্রিতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নিলাম কমিটিথর বিরুদ্ধে।
সুত্র জানায়, ওই উপজেলার দহগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র গত ১১ মার্চ ভারতীয় ৩৩টি গরু আটক করেন। গরু গুলো নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পেতে কালক্ষেপন হওয়ায় ওই গরু গুলো লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয় দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদকে। গরু গুলো পালনে দায়িত্ব অবহেলার কারণে ১টি গরু মারাও যায়। এক মাস ১৯ দিন পর আদালতের অনুমুতি ক্রমে গত ২৭ এপ্রিল গরু গুলো প্রকাশ্য নিলামে ২৫ লক্ষ টাকা ধরে বিক্রি করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বম্মর্ণের নেতৃত্বে নিলাম কমিটি। এ নিলামকে কেন্দ্র করে ওই দিন দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংর্ঘষও বাঁধে।
এ ছাড়া নিলামেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নিলাম কমিটিথর বিরুদ্ধে। সাধারণ গরু ব্যবসায়ীদের নিলামে অংশ গ্রহনের সুযোগ না দিয়ে তাড়াহুড়া করে নিলাম শেষে ইউনিয়ন পরিষদ ত্যাগ করেন নিলাম কমিটিথর সদস্যবৃন্দ। যা নিয়ে সাধারণ গরু ব্যবয়াসীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ দিকে ওই গরু গুলোকে ৪৯ দিন লালন-পালনের জন্য দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়ে বিল ভাইচার নিলাম কমিটিথর কাছে অনুমোদন নিয়েছেন। যাতে প্রতিটি গরুর পিছনে প্রতিদিন ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ শত ৪৩ টাকা। ওই বিল ভাউচার মতে একটি গরু প্রতিদিন ২ শত ২২ টাকার শুধু খাদ্যই খেয়েছেন এবং অন্যন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। যা কোনো ভাবেই বিশ্বাস যোগ্য নয় এমন দাবী স্থানীয় গরু খামারীদের।
এ ব্যাপারে কয়েকজন খামারী জানান, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শ্রমিক সব মিলে প্রতি দিন একটি গরুর পিছনের ২ শত টাকাও ব্যয় হবে না সেখানে কি ভাবে ৪ শত ৪৩ টাকা ব্যয় হতে পারে ? সঠিক ভাবে লালন পালন না করায় একটি গরু মারা গেছে এতেই বুঝা যায় ওই গরু গুলোর পিছনে পরিমান মত ব্যয় করা হয়নি। এটি একটি আজব বিল।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারী টাকা আত্মসাৎ করতেই এমন বিল ভাউচার তৈরী করে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ অনিয়মের সাথে একটি সিন্ডিকেট জড়িত এমন অভিযোগ রয়েছে।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, আমি শুধু খাদ্য সরবরাহ করেছি। এতে ৪৯ দিনে ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার খাদ্য গিয়েছে। বাকি ব্যয়ের সাথে আমি জড়িত নই।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বলেন, প্রতিটি গরুর পিছনে প্রতি দিন ৪ শত ৪৩ টাকা ব্যয়ে হয়েছে এটা অতিরিক্ত নয়। সব কিছু নিময় মেনেই ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাটগ্রাম উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটিথর সভাপতি রামকৃষ্ণ বর্ম্মণ বলেন, গরু গুলো ২৫ লক্ষ টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হয়েছে। ওই গরু গুলো লালন পালন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যয় অতিরিক্ত ধরা হয়েছে কি না তা আমি বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাই ভালো বলতে পাবেন।