রমজানে মুড়ি কারখানায় শ্রমিকের ব্যস্ত সময় মুড়ি কারখানায় প্রচন্ড গরমে জ¦লছে বিশাল চুলা। সেখানে চাল গরম করা হচ্ছে। গরম চাল মেশিনে ফেলার পর বেরিয়ে আসছে শুভ্র মুড়ি। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা ট্রাকে মুড়ি তুলে দিচ্ছেন। এই মুড়ি দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে চাহিদা মিটিয়ে হচ্ছে।
রমজান মাস উপলক্ষে ব্যস্ততায় দিন কাটছে মুড়ি কারখানাগুলোর মালিক শ্রমিকদের। উপজেলায় ৮টি মুড়ির কারখানা রয়েছে। এখানে প্রধানত গুঠি মুড়ি, তেইশ মুড়ি ও ষোল মুড়ি ও স্বর্ণা মুড়ি ভাজা হয়। ষোল মুড়ি কেজি প্রতি ৬০ টাকা এবং স্বর্ণা মুড়ি কেজি ৫৫ টাকা দামে পাইকারি বিক্রি হয়। তবে গুঠি মুড়ির বর্তমানে চাহিদা বেশি।
উপজেলার মা মুড়ির মিলের মুড়ি তৈরির কারিগর মোঃ জিন্নাত আলী জানান, 'তাদের কারখানায় শুধু চাল আর লবণ দিয়ে মুড়ি ভাজা হয়। এখানে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয় না। তাই এই মুড়ি দিন দিন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও মুড়ির ক্রেতা রিয়াজুল ইসলাম, খলিলুর রহমান জানান, 'তিনি রমজান উপলক্ষে প্রতি বছর এসব মিল থেকে মুড়ি ক্রয় করেন। সেখানে চালে শুধু লবণ মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করা হয়, তা খেতেও সুস্বাদু।'
“মা’ মুড়ির মিলের ব্যবস্থাপক সোহাগ হোসেন বলেন, 'চালের দাম বাড়ায় উৎপাদন কমেছে। আমরা আগে ১০/১১ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতাম। এখন তা ৫ জনের নিচে নেমে এসেছে। আগে মাসে ৫০ টনের অধিক বিক্রি হত। তবে এই রোজার সময় মুড়ির চাহিদা বেশি। মুড়ির মিল মালিক মোজাহিদ সরকার বলেন, পার্শ্ববর্তি বদরগঞ্জ, পার্বতীপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, ফুলবাড়িসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মুড়ি যায়। ২০ কেজি ওজনের বস্তা ১ হাজার টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালে ৪৩ কেজি করে মুড়ি হয়ে থাকে।
অপরদিকে রমজান মাসে রোজাদারদের বিভিন্ন ইফতার সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম মুড়ি। উপজেলার কয়েকটি গ্রাামে এখন চলছে রমজান মাস ও আসন্ন ঈদ উল ফিতর এর জন্য মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা। কয়েকটি গ্রামে শত বছর ধরে মুড়ি ভাজা হয়। হাতে ভাজা মুড়ির জন্য ওই গ্রাম প্রসিদ্ধ। চৈত্রের খরতাপ। তার মধ্যে দুপুরে কাঠের চুলা জ¦ালিয়ে মুড়ি ভাজছেন নারীরা। এরপর মুড়ি (চালুন) ছাঁকুনী দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। পুরুষরা মুড়ি বস্তায় ভরে মুখ সেলাই করছেন। রসুলপুর গ্রামের এক বাড়িতে দেখা যায় এ দৃশ্য। একইভাবে ব্যস্ত সময় পার করছে ওই গ্রামের ৫/৬ পরিবার। এসব পরিবারের ছেলে-বুড়ো সবাই ব্যস্ত। গ্রামের পাশে পিকআপ ভ্যানে ও ট্রাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে মুড়ির বস্তা। সেগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাটে, বাজারে ও শহরে। অনিল চন্দ্র রায় বলেন, সারা বছর মুড়ি ভাজেন। হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে। এ মুড়ি খেতেও সুস্বাদু। দাম একটু বেশি হলেও সচেতন মানুষ হাতে ভাজা মুড়িই খোঁজেন। রোজার সময় মুড়ির চাহিদা বেশি। তাই ব্যস্ততাও বেশি। আরেক মুড়ি উৎপাদনকারী আমির আলী বলেন, সাতনালা গ্রামের প্রায় ২৫/৩০ টি পরিবার প্রতিদিন প্রায় ৬০/৭০ বস্তা মুড়ি ভাজেন বলে জানা যায়। প্রতি বস্তায় ৪০ কেজি মুড়ি থাকে। তারা পাইকারি প্রতি কেজি ৫৩ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন। খুচরা বাজারে তা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এবার চালের দাম বেশি হওয়ায় তেমন লাভ পাবেন না।