করোনা রোগীর সংখ্যা রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে কমে আসছে। গত এক সপ্তাহে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্ত কমার পাশাপাশি হাসপাতালে কিছুটা হলেও কমেছে রোগীর চাপ। ঢাকার সরকারী-বেসরকারী কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় এক মাস আগে যেখানে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি ছিল,এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে রাজধানীর বৃহত্তর কভিড হাসপাতাল মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আসন সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤েœ নেমে এসেছে। দেশের বৃহত্তর করোনা হাসপাতাল রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপতালেই তার বড় প্রমাণ মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে রোগীর চাপ কমে এসেছে। অন্যান্য দিন আইসিইউতে সিট ফাঁকা পাওয়া না গেলেও গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালটিতে ওই চাপও অনেকটাই কমেছে। এখন মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি হতে আসা রোগীর তেমন ভিড় নেই। বর্তমানে ওই হাসপাতালটিতে ১২৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আগে হাসপাতালটিতে প্রচুর রোগীর ভিড় হলেও ওই তুলনায় কয়েকদিন ধরে রোগীর চাপ কিছুটা কম। তাছাড়া আগে ওই হাসপাতালের আইসিইউ বেড কখনও ফাঁকা থাকতো না। কিন্তু এখন বেড ফাঁকা রয়েছে। হাসপাতালটিতে এখন রোগী বা রোগীর স্বজনদের ভিড়ও নেই। আগে একটির পর একটি এ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে আসতো। ওই চাপ অনেকটাই কমে গেছে। গত রোববার হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী হাসপাতালটিতে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে মোট ৭৫ জন। আর পুরো হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি আছে ১২৪ জন। যার মধ্যে জরুরি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৭ জন রোগী। রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাইকারি কাঁচাবাজারের ভবনে স্থাপন করা এক হাজার বেডের ওই হাসপাতালের নাম দেয়া হয়েছে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল। গত ১৮ এপ্রিল হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকবে। তাছাড়াও ২৫০ শয্যার এইচডিইউ (উচ্চ নির্ভরতা ইউনিট), ৫০ বেডের জরুরি বিভাগ (৩০টি পুরুষ, ২০টি নারী) ও ৫৪০ (সিঙ্গেল) রুমের আইসোলেশন ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। ওই রুমগুলো হবে অনেকটা কেবিনের মতো। দ্রুততই বেডের সংখ্যা আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বা উপসর্গ আছে তেমন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীরা প্রথমে ট্রায়াজে প্রবেশ করবে। সেখানে দুটি জোন আছে। যাদের মৃদু উপসর্গ আছে বা হেঁটেই আসতে পারছে চিকিৎসা নেয়ার জন্য তাদের যদি ভর্তির প্রয়োজন না হয় তবে ভর্তি করা হয় না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়। আর পরে এসে রোগী আবার রিপোর্ট করতে পারবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা রয়েছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসবে তারা ট্রায়াজ-২তে চলে যায়। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। নীচ তলাতেই ৬ বেডের একটা আইসিইউ সেটাপ আছে। সেখানে ভেন্টিলেটরের সুযোগও থাকবে। আর তাই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্ট্যাবল হওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঠিয়ে দেয়া হবে দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ডে। সেখানে যদি কারো অবস্থা খারাপ হয় তবে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আইসিইউ বা এইচডিইউতে। আর যদি একটু স্ট্যাবল হয় বা ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে তবে তাদের কেবিনে দিয়ে দেয়া হয়। ওই কেবিনগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ হাই-ফ্লো নজেল ক্যানোলা সুবিধা রয়েছে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত মনিটরের ব্যবস্থাও করা হবে। ওখানে রোগী কিছুটা স্ট্যাবল হলে তাকে ধীরে ধীরে ডিসচার্জ হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ২৮ মার্চের তুলনায় ২৮ এপ্রিল করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকলেও শয্যা সংখ্যা দ্রুত বাড়ানোর ফলে সঙ্কট অনেকটা কমে এসেছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের বিধিনিষেধও হাসপাতালে চাপ কমাতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন। তবে এখনো যে পরিস্থিতি, তাতে নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই।
অন্যদিকে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডাঃ মুশতাক হোসেন জানান, সংক্রমণ যেন শূন্যে নামিয়ে আনা যায়, সেদিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে-করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউও আসতে পারে। ওই চিন্তা মাথায় রেখে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে আগেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।