করোনা প্রাদুর্ভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নন-কভিড রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। মূলত করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই হাসপাতাল এড়িয়ে চলছে। ফলে সরকার হাসপাতালগুলোতে মজুদ থাকা ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সারা দেশে সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬১৮টি। তার মধ্যে কভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের সংখ্যা ৯৬টি। তাছাড়া কিছু হাসপাতালে বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের কিছু সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে একই সঙ্গে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অনেক মানুষই সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য এখন আর হাসপাতালমুখী হতে চাইছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়অ
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উপজেলা কমপ্লেক্সে আগে সাধারণ সময়ে দিনে যেখানে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসতো, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সেখানে এখন দিনে ৩০-৪০ জন রোগী আসে। ফলে রোগীর জন্য সরকার থেকে যেসব ওষুধপত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো এক প্রকার পড়েই থাকছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিপুল পরিমাণ ওষুধের মেয়াদ শেষে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ৪৭ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ওসব ওষুধ সরবরাহ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কাছে এখন ওসব ওষুধই অলস পড়ে থাকছে।
সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে বরাদ্দ করা ওষুধের যেন যথাযথ ব্যবহার হয় তা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে অব্যবহৃত ওষুধ সমন্বয়ের মাধ্যমে বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোগী সেবায় ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেজন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব সই করা একটি চিঠি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে কভিড রোগীদের পাশাপাশি নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। নন-কভিড বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও গর্ভবতী নারীর চিকিৎসা, প্রসব সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এতো অল্পসময়ে দেশের হাসপাতালের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব না হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কথা জানা যায়। তারপর ২০২০ সালের ৮ মার্চ সরকার বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্তের কথা জানায়। এর ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কখনো বেড়েছে আবার কখনো কমেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ থেকে আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে সংক্রমণ। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। ফলে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তিরও চাপ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে কভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অন্য রোগীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়টি এক অর্থে অন্য রোগীদের প্রতি অবিচার হলেও সংক্রমণের গুরুত্ব বিবেচনায় কভিড রোগীরা বেশি গুরুত্ব পাবে এটাই স্বাভাবিক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে হলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে হবে। সেজন্য সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।