শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর পূর্বপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতকুটির। যেখানে চাহিদা ও উন্নত মানসম্পন্ন জামদানি শাড়ির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে টু পিসসহ হরেক রকমের কাপড়। কারিগররা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের সুনিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন বিভিন্ন রঙের নানা ডিজাইনের ওইসব কাপড়।
স্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, ২০০৭ সালে তার পুঁজি ছিল মাত্র ১৭ হাজার টাকা। বর্তমানে তার মোট পুঁজি ১০ লাখ টাকার বেশি। এখন তার ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬টি তাঁত মেশিন আছে। যেখানে প্রতিনিয়ত ১৬ থেকে ২০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। কামরুল আরও জানান, তিনি ২০০০ সালের দিকে কাজের সন্ধানে ঢাকা যান। সেখানে কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকায় উঠেন নারায়ণগঞ্জে ফুফুর বাড়িতে। পরে একটি তাঁতকলে চাকরি নেন। কাজ শেখার একপর্যায়ে তিনি ২০০৭ সালে শেরপুরে ফিরে এসে একটি তাঁত দিয়ে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন।
কামরুল জানান, দুইজন শ্রমিক মিলে ৪ দিনে একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করেন। প্রতিটি জামদানি শাড়ির জন্য একজন শ্রমিক ৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান। প্রতিটি শাড়ির পাইকারি মূল্য ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও টু পিস ২ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। লাভের ব্যাপারে কামরুল জানান, প্রতি তিন মাস পরপর হিসাব করে দেখেন, সব খরচ বাদ দিয়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাভ থাকে। এতে প্রতি মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি আয় হয়।
জানা যায়, জামদানি শাড়িগুলো জমিয়ে মাসে একবার ঢাকার পাইকারদের কাছে পাঠিয়ে দেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। ওই কাজে স্থানীয় বাস পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। শাড়ি বুঝে পেয়ে সেই একই গাড়িতে পাইকাররা জামদানি তৈরির প্রয়োজনীয় সুতা পাঠিয়ে দেন। এরপর সেটি শেরপুর থেকে সংগ্রহ করেন তারা।
স্থানীয় তাঁত কারিগর গোলাম মাওলা মিয়া বলেন, কলেজ পাস করে বেকার হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করতাম। আমাদের গ্রামে কামরুল ভাই তাঁত মেশিন নিয়ে আসার পর তার কাছে কাজ শিখেছি। এখানে কাজ করে যা বেতন পাই, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলে। নারী তাঁত কারিগর ইয়াসমিন বেগম বলেন, গ্রামের নারীদের অনেক নিয়ম মানতে হয়। পরিবারের অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়া যায় না। কামরুল ভাই এলাকায় তাঁত মেশিন নিয়ে এসে আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছেন। নিজ উদ্যোগে আমরা নারীরা তাঁতের কাজ শিখেছি এবং বর্তমানে অনেকেই এ কাজ শিখছে। কামরুল ভাইকে অনুরোধ করলে তিনি আমাদের বাড়ির ভেতর কয়েকটি তাঁত মেশিন স্থাপন করে দেওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই কাজ করতে পারছি।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজ আল মামুন বলেন, ইতোমধ্যে আমি চরশেরপুরের ওই তাঁত কুটির পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় তাদের কাজকে আরও বেগবান করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব সময় খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। তাদের যাতায়াত করার কাঁচা রাস্তার গর্তসমুহ চেয়ারম্যানকে বলে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।