যে দেশ থেকে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে বিশ্বে মহামারী বাঁধিয়ে ৩২ লাখের বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, সেই চীনে মৃতের সংখ্যা এখনও পাঁচ হাজারের নিচে রয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা লাখের সামান্য বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মাত্র ২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে একলাখ ৩ হাজার ৭৯৬ জন হয়েছে। এই একদিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও মারা যাওয়ার খবর না থাকায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা আগের মতোই ৪ হাজার ৮৫৮। গত বছরের ৮ মার্চ যখন বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছিল, সেদিন চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৮৫৯ জন। বছর গড়িয়ে এখন বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৩ জন, মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। অথচ ২০১৯ সালের শেষ এবং ২০২০ সালের শুরুর দিকের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। তখন চীনে হু হু করে রোগী বাড়ার খবরই আসত গণমাধ্যমে। অথচ দেড় বছর পর যখন গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাস মহামারীতে অস্বাভাবিক জীবনে, তখন পরিস্থিতি সামলে উঠে চীনারা রয়েছে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হতে থাকলে তা সবার মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। রয়টার্সরোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে তা অন্য প্রদেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার পর গবেষকরা জানান, এর কারণে নতুন ধরনের একটি করোনাভাইরাস। ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয় সার্সকভ-২, আর রোগ নাম পায় কোভিড-১৯। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারী ঘোষণা করে। ২০২০ সালের শুরুতে চীনে ছিল বিপর্যস্ত অবস্থা। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অবধি চীনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। এর মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ হাজার ১৫২ জন। সেদিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ হাজার। কড়া লকডাউনসহ কঠোর পদক্ষেপে চীন মহামারীর রাশ যে টেনে ধরেছি, সেই বাঁধন এখনও হালকা হতে দেয়নি। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকাদানও ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে চীন। গত শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ৩১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। চীন থেকে গত বছরের শুরুতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর বিপর্যয় নামে ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্যে। ইউরোপকে কাঁবু করে করোনাভাইরাস হানা দেয় যুক্তরাষ্ট্রে, নামিয়ে আনে দুর্যোগ। এরপর ব্রাজিলে নামে বিপর্যয়। রয়টার্সবিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন ত্রাহি অবস্থা দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতের। দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু এখন প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনকে ছাপিয়ে যাচ্ছে দেশটিতে। আর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যও ফুটিয়ে তুলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ, আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৫ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে শীর্ষস্থানে এখনও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শনাক্ত রোগী ৩ কোটি ২৬ লাখ। মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি ৫ লাখ ৮১ হাজার সেখানে। আক্রান্তের সংখ্যায় তারপরেই রয়েছে ভারত ২ কোটি ২৩ লাখ রোগী নিয়ে। এই দেশে মারা গেছে ২ লাখ ৪২ হাজার। মৃতের সংখ্যায় ভারত তৃতীয়, তার আগে রয়েছে ব্রাজিল ৪ লাখ ২১ হাজার মৃত্যু নিয়ে। ব্রাজিল আক্রান্তের হিসাবে রয়েছে তৃতীয় স্থানে ১ কোটি ৫১ লাখ রোগী নিয়ে। আক্রান্তের সংখ্যায় এর পরের শীর্ষ দেশগুলো হল- ফ্রান্স (৫৮ লাখ), তুরস্ক (৫০ লাখ), রাশিয়া (৪৮ লাখ), যুক্তরাজ্য (৪৪ লাখ), ইতালি (৪১ লাখ), স্পেন (৩৫ লাখ), জার্মানি (৩৫ লাখ), আর্জেন্টিনা (৩১ লাখ)। আর মৃতের সংখ্যায় শীর্ষ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারতের পরে রয়েছে- মেক্সিকো (২ লাখ ১৮ হাজার), যুক্তরাজ্য (১ লাখ ২৭ হাজার), ইতালি (১ লাখ ২২ হাজার) রাশিয়া (১ লাখ ১১ হাজার), ফ্রান্স (১ লাখ ৬ হাজার), জার্মানি (৮৪ হাজার), স্পেন (৭৮ হাজার), কলম্বিয়া (৭৭ হাজার), ইরান (৭৪ হাজার)। আক্রান্তের সংখ্যায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৩তম অবস্থানে, প্রায় পৌনে আট লাখ রোগী নিয়ে। মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। আর শুরুতে দুই তালিকায় শীর্ষে থাকা চীন আক্রান্তের সংখ্যায় এখন রয়েছে ৯১তম স্থানে, আর মৃতের সংখ্যায় দেশটির স্থান ৫৮ নম্বরে।