বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চলতি মাসে কার্যকরের জন্য বেসরকারি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডার ৯০৬ টাকা পুননির্ধারণ করেছে। কিন্তু ওই দামে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে আগের দামেই এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। কমিশন নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০-২০০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকরা বিইআরসি প্রতি ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, বিইআরসি বাজারে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেই দায় সেরেছে। আদেশ কার্যকর করার বিষয়েও দৃশ্যমান কোনো তদারকি সংস্থাটির নেই। বিইআরসি, লোয়াব এবং গ্রাহকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিইআরসি কভিডসহ নানা কারণে এপ্রিলে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল বিউটেন ও প্রোপেনের দাম কমায় দেশের বাজারে এলপি গ্যাসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৯ এপ্রিল বিইআরসির পক্ষ থেকে এলপি গ্যাসের দাম পুননির্ধারণের আদেশ দেয়া হলেও দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই আগের দামেই এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। তবে কমিশন সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিইআরসি দাম পুননির্ধারণের ঘোষণা দেয়ার পর রাজধানীসহ জেলা শহরে কমিশন নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। অন্তত ২৮টি জেলায় কমিশন নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীসহ বেশির ভাগ জেলায় আগের দামেই ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত। কোম্পানি ও জায়গা ভেদে এ দাম গড়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কমিশন নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ২০০ টাকা বেশি। এলপি গ্যাসের রিটেইলার ও ডিলারদের মতে, সরকার ৯০৬ টাকা এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে তারা অপারেটরদের কাছ থেকে কিনতে পারছে না। কোম্পানি থেকে যদি কম দামে এলপি গ্যাস কেনা না যায়, তাহলে ওই দামে রিটেনলার ও ডিলাররা গ্রাহকের কাছে কীভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি করবে। গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে বাজারে সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের দাম সরকার বেঁধে দেয়। ওই সময় ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ওই দামে গ্যাস বিক্রি হয়নি। বরং ব্যবসায়ীরা পণ্যটির আমদানির নানা খরচ তুলে ধরে কমিশনের কাছে আরো প্রায় ৩০০ টাকার মতো মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। ইতিমধ্যে গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের দাম টনপ্রতি সাড়ে ৫ হাজার টাকা কমলে দ্বিতীয় দফায় পণ্যটির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু দুই দফায় দাম পুননির্ধারণ করা হলেও বাজারে তার কার্যকারিতা দেখা যায়নি।
এদিকে এলপিজি খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার যে দামে এলপি গ্যাসের দাম বেঁধে দিয়েছে, ওই দামে কোনোভাবেই বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। যেসব খরচ ধরে কমিশন মূল্য নির্ধারণ করেছে, সেখানে আরো বেশকিছু খরচ রয়েছে। বিশেষত সিলিন্ডার প্রাইজ, ডিলার ইনভেস্টমেন্ট এবং রিটেইলার পরিবহন খরচ। অপারেটররা সিলিন্ডারে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছে। ফলে ওসব খরচ যোগ করলে এলপি গ্যাস কিনতে ক্রেতাদের খরচ আরো বাড়বে।
অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এলপি গ্যাসের বিইআরসি নির্ধারিত দাম বাজারে বাস্তবায়ন হতে গেলে বেশকিছু সময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে অপারেটরদের দাবি কমিশনের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে মিলবে না। তবে কমিশন মূল্য নির্ধারণে যে বিষয়গুলো ঠিক করেছে, সেটিকে আরো কিছুটা টেকনিক্যালি সমঝোতায় আনা যেতো। একেবারে নির্ধারণ না করে বরং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়া যেতো। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আরো সহজ হতো।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন ‘এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর (লোয়াব) প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী জানান, রেগুলেটরি কমিশন যে আদেশ দিয়েছে, সেটিকে লোয়াব সম্মান জানায়। কিন্তু মূল্য নির্ধারণের সময় যে বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলো লোয়াবের পক্ষ থেকে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। করোনা মহামারী স্বাভাবিক হলে বিইআরসি বিষয়টি নিয়ে লোয়াবের সঙ্গে বসবে।
একই প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ইলাহি চৌধুরী জানান, এলপি গ্যাসের দাম কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু কমিশন আগ্রহ দেখালে হবে না, গ্রাহককেও সচেতন হতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিক্রেতা দাম বেশি নিলে ক্রেতা সেটি কেন দেবেন? সেক্ষেত্রে ক্রেতা সচেতন হলে বিক্রেতারা সুযোগ নিতে পারবে না। আর যদি নেয় তাহলে সেটি কমিশনকে লিখিত জানালে কমিশন তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।