কুমিল্লার হোমনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে ৪৬টি দোকান ভস্মিভূত এবং প্রাথমিকভাবে এতে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করেছে বাজার কমিটি। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গত মঙ্গলবার (১১ মে ২০২১ইং) রাত সাড়ে এগারোটায় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর বাজারে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যথাসময়ে পানি স্প্রে করার মোটর চালু করে অগ্নি নির্বাপণে অংশগ্রহণ করতে না পারায় ফায়ার সার্ভিসের প্রতি ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়রা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি এসে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এই অগ্নিকাণ্ডে চাউলের দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, তেল, কাপড়, সার ও অন্যান্য দোকানসহ ৪৬ টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়ে প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে।
পরের দিন বুধবার স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ আলাদা আলাদা সময়ে অগ্নিকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সেলিমা আহমাদ এমপি ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ ব্যক্তিগতভাবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাজারে সবচেয়ে বড় চাল ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হুমায়ুন কবির জানান, আগুনে তার সব শেষ হয়ে গেছে। দোকানে ২২ লাখ টাকার মালামাল ছিল, যা পুড়ে যাওয়ায় তিনি পথে বসে গেছেন।
রামকৃষ্ণপুর বাজার কমিটির সভাপতি ও চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার মোল্লা বলেন, 'মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ টি দোকান পুড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে চাউলের দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, সারের দোকান, কাপড়ের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে চাল দোকান বেশি। প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হোমনা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ ওসমান গণি জানান, রামকৃষ্ণপুর বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাত বারোটার সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। আগুনের ভয়াবহতার কারণে মুরাদনগর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। ৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। ততক্ষণে ৪৬টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা আমরা নিরূপণ করছি।
হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত এবং প্রাথমিকভাবে ৪৬টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত হলে তাদের আমরা সাহায্য দিতে পারব।
ভস্মিভূত বাজার পরিদর্শন করে সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী সাংবাদিকদের বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। তারপরও প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে তার কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করব। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। ২০১৮ সালেও এই বাজারে আগুন লেগেছিল। আগুনের ব্যাপারে আমাদেরও সতর্ক হতে হবে। চিন্তাভাবনা করছি- প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাতে নিরাপদে থাকে সে লক্ষে আমরা উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে নিয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।