করোনা প্রাদুর্ভাবে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেনের তীব্র প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণে দেশে প্রতিদিন অর্ধশতের বেশি মানুষ পস্খাণ হারাচ্ছে। আক্রান্তদের অনেকেরই শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জরুরি উপাদান অক্সিজেন। দেশে করোনার রোগী বাড়ায় বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে দেশে অক্সিজেন সঙ্কট মোকাবেলায় অক্সিজেন মজুদ রাখার পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদনও। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনায় অক্সিজেনের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে বেশির ভাগ সরবরাহকারী ইতিমধ্যে শিল্প-কারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। উৎপাদিত অক্সিজেনের সবটুকুই করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে দেয়া হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনার সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতিমাত্রায় সংক্রামক হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশিসংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন হাজার লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১৮০ টন। তার মধ্যে বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিন্ডে বাংলাদেশ’ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে ৯০ টন। স্পেক্ট্রা নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক গড়ে ২৪ দশমিক ৫ টন সরবরাহ করছে এবং ইসলাম অক্সিজেন সরবরাহ করছে ৪০ টন। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে। তবে ভারত ২২ এপ্রিল থেকে অক্সিজেন রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। গত ২১ এপ্রিলের আগে এক সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টন অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। তারপর আর অক্সিজেনের চালান আসেনি। এমন অবস্থায় সরকার পরিস্থিতি সামলাতে অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিয়েছে। সেজন্য প্রতিদিন প্রায় ২৭০ টন অক্সিজেন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে সাধারণ ও কভিড রোগী মিলিয়ে দৈনিক ৭০-৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পিক সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ২১০ টন। আর এ মুহূর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন। তবে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে অক্সিজেন সংকটের কারণে বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। যে কোনো সময় একই রকম অবস্থা যাতে এদেশে না হয় সেজন্য সরকারিভাবে আপৎকালীন সময়ের জন্য এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আরো ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। এদিকে বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা চিকিৎসায় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে অক্সিজেন মূল ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অতি দ্রুত দেশের সরকারি ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ওই ১৩০টি হাসপাতালের মাধ্যমে এখন প্রায় ১৬ হাজার শয্যায় অক্সিজেন বেড কভিড রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০০টি আইসিইউ বেডে মানুষ এখন কভিড চিকিৎসা নিচ্ছে। শিগগিরই সেখানে আরো ১০০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে।